উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ফরিদপুরে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১১গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বরবিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস
No icon

বিচিত্র নির্বাচন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

আশুগঞ্জ নদীবন্দরের পাশেই চর চারতলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। কার্যালয় চত্বরে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে কর্মিসভার পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বসেন বৈঠকে। আলোচনার বিষয়বস্তু, ব্রাহ্মণবড়িয়া-২ আসনের আগামী ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার জন্য নির্বাচনী এজেন্ট জোগাড়!আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হানিফ মুন্সী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন- কে কতজন এজেন্ট জোগান দেবেন। বিএনপির মনোনয়নে চারবার এমপি নির্বাচিত হওয়া উকিল সাত্তারের জন্য আওয়ামী লীগ কেন এজেন্ট জোগাড় করে দিচ্ছে- প্রশ্নে হানিফ মুন্সী  বললেন,তিনি এত দিন একটা দলে ছিলেন। সেই দলের (বিএনপি) কেউ তো এখন তাঁর সঙ্গে নেই। তাঁর সঙ্গে আমরা (আওয়ামী লীগ) আছি।এ বক্তব্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বহুল আলোচিত উপনির্বাচনের সারাংশ। শুধু স্থানীয় নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং এমপিরাও নেমেছেন ৪৩ বছর বিএনপির রাজনীতি করা উকিল সাত্তারের পক্ষে। গতকাল বিকেলে সরাইলের অরুয়াইলে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থক গোষ্ঠীর জনসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন তা খোলাখুলিই জানান। তিনি বলেন, বিএনপি উকিল সাত্তারকে ছুড়ে ফেলেছে। তারেক জিয়া তাঁর সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। তাঁর সঙ্গে এখন আর বিএনপি নেই। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তাঁর পাশে আছি।

আচরণবিধি অনুযায়ী এমপিদের ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। আচরণবিধি ভেঙে উকিল সাত্তারের পক্ষে রোববার প্রচার চালান আওয়ামী লীগের দুই এমপি জেলার সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও উম্মে সালমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ। মোকতাদির চৌধুরী বলেন,গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সাত্তার সাহেব। তাঁকে বিজয়ী করে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে।বিএনপির এমপিরা গত ডিসেম্বরে দলের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন। উকিল সাত্তার পদত্যাগী সাত এমপির একজন। তাঁর পদত্যাগে আসন শূন্য হওয়ার ২০ দিন না পেরোতেই উপনির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নামেন তিনি। দল থেকে পদত্যাগ করে উকিল সাত্তার প্রার্থী হওয়ায় উপনির্বাচনের হিসাব-নিকাশ উল্টে গেছে। তাঁর ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে সমর্থন চাইনি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি, সরকারি দল তো নির্বাচন বর্জন করেনি। তাই দলটির নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশও সমর্থন দিয়েছে। এই সমর্থন আমরা লুফে নিয়েছি।

যদিও ভোটার ও স্থানীয় নেতাদের ভাষ্য, বিএনপির পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও উকিল সাত্তারের সংসদে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ; উন্মুক্ত রেখেছিল। দলটির তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। জাপার দুইবারের এমপি জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সরে গেছেন ভোট থেকে। এই চার প্রার্থী সরে যাওয়ার পর উকিল সাত্তারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ। তিনি তিন দিন ধরে নিখোঁজ।বাকি যে দু জন ভোটের মাঠে রয়েছেন- জাপার আবদুল হামিদ ভাসানী ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল স্বল্প পরিচিত। রাজনৈতিক সূত্রের ভাষ্য, উকিল সাত্তারকে যেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার বদনাম নিতে না হয়, সে জন্য দুর্বল দুই প্রার্থীকে ভোটে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে না হয় এবং জয়ের পথ ঝুঁকিমুক্ত করতে সবলদের ভোট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাপা মনোনয়ন দিয়েছিল একাদশ নির্বাচনের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। তাঁর ভাষ্য, উকিল সাত্তারকে জেতাতে ভোট হচ্ছে। এ ভোটে অংশ নিয়ে লাভ নেই। তাই প্রার্থী হননি। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া এক আওয়ামী লীগ নেতাও জানান, উকিল সাত্তারই জিতবেন বা তাঁকে জেতানো হবে। তাই নির্বাচন করছি না।