NEWSTV24
ঘুস ছাড়া মেলে না এমপিও
মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১৬:২২ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজে বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্য চলছে। দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার এই আবেদন নিষ্পত্তি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়।কিন্তু সেবাপ্রার্থীদের প্রতিটি কাজে নির্ধারিত হারে অর্থ দিতে হয়। অথবা প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির করাতে হয়। এই দুটির কোনোটির আশ্রয় না নিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। কখনো আবার নানান ত্রুটি ধরে আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘুস ছাড়া এমপিও মেলে না বললেই চলে। চলতি এবং গত সপ্তাহের একাধিক দিন মাউশির ঢাকা অঞ্চলে উপপরিচালকের দপ্তরে সরেজমিন গিয়ে প্রকাশ্যে ঘুস দেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়।এই প্রতিবেদক নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে নিজের ভাবির (গোপালগঞ্জের একটি স্কুলের শ আদ্যাক্ষরের শিক্ষিকা) বেতন স্কেল দশম থেকে নবম গ্রেডে উন্নীত করতে ওই দপ্তরের উচ্চমান সহকারী রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।উল্লেখ্য, এমপিও প্রত্যাশীদের তালিকায় নাম ছিল ওই শিক্ষিকার। রাবেয়া কাজটির জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তিন হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। টাকাটা তিনি ভবনটির খোলা বারান্দায় সিঁড়ির সামনেই গ্রহণ করেন।

এরপর তার (রাবেয়া) কাছে একই স্কুলের দুই কর্মচারীর নতুন এমপিওভুক্তির কাজের কথা জানানো হয়। তখন তিনি কাগজপত্র ঠিক থাকলে ২০ হাজার, নইলে ৫০ হাজার টাকা রেটের কথা জানান।এক ঘণ্টা পর ভবনটির নিচে তার সঙ্গে দুই কাজের জন্য ১৫ হাজার টাকা রফা করা হয়। ওই সময় তিনি বলেন, নতুন স্যার (উপপরিচালক) এসেছেন। তাছাড়া আরও ৩-৪ জনকে টাকার ভাগ দিতে হয়।তাই এর কম নেওয়া হয় না। এরপর রফাকৃত টাকা শুক্রবার আজিমপুর কোয়ার্টারে তার সরকারি ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিতে বলেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার ফোন করলে স্থান পরিবর্তন করে রোববার তার অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন।এরপর রোববার গিয়ে দেখা যায়, তিনি অফিসে নেই। তখন অফিসের অন্য দুই কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তাদের কাছে টাকা দিয়ে যেতে বলেন। পরে এই প্রতিবেদক সাংবাদিক পরিচয়ে রোববার রাতে রাবেয়া সুলতানার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে অর্থগ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, যারা কাজ করতে আসেন, তাদের পরামর্শ দিই। তখন তারা কিছু পয়সাপাতি দিয়ে যান। জোর করে নেওয়া হয় না। এসব ঘটনার ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড যুগান্তরের কাছে রক্ষিত আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল ঢাকা নয়, মাউশির প্রায় সব অঞ্চলেই একইভাবে এমপিও-সংক্রান্ত যত কাজ আছে, তাতে কম বেশি অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জানেন। যে কারণে মাঝেমধ্যে দু-একটি লোক দেখানো সতর্ক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করতে দেখা যায়। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এ ধরনের একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।কিন্তু দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত হওয়ার পরও সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসাবে কেবল বদলি করা হচ্ছে। এর প্রমাণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি ঢাকা অঞ্চলেই জনৈক সালমা বেগম নামে এক কর্মচারীকে ফরিদপুরের মধুখালীর একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এমপিও অবৈধভাবে করানোর অভিযোগে রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।