NEWSTV24
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস-ফেলের খেলা
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫ ১৪:৫৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত ৪ জুন প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, একই দিন ও একই বিষয়ে কোনো কোনো বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জনই ফেল করেছেন। আবার অন্য বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন পাস করেছেন। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনাকে ভূতুড়ে, গোঁজামিল ও অযৌক্তিক বলছেন প্রার্থীরা।বোর্ডভিত্তিক ফলে ব্যাপক বৈষম্য দেখা যাওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীরা। তারা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ফল পুনর্মূল্যায়ন ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীতে আন্দোলন করছেন তারা।গতকাল সোমবারও শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীরা এনটিআরসিএ ভবন ঘেরাও করেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষায় ৮৩ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ হাজার জনকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে। তাই তাদেরও উত্তীর্ণ সনদ দিতে হবে।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ভাইভা বোর্ডে মাত্র ৮ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এই ফলবৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা, মেধা, এমনকি প্রশ্নের উত্তরদানের দক্ষতা বিবেচনায় না নিয়ে মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।তবে এ বিষয়ে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মফিজুর রহমান কথা বলতে চাননি। প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী সমকালের কাছে দাবি করেন, ভাইভা প্রক্রিয়া এবার তুলনামূলকভাবে কঠিন ছিল। প্রার্থীর প্রেজেন্টেশন, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, যোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনায় ফল নির্ধারণ করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ফেল করানো হয়নি। চূড়ান্ত ফল পুনর্বিবেচনার কোনো নিয়ম নেই; তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।মৌখিক পরীক্ষায় ২৩ হাজার প্রার্থী ফেল শিক্ষক নিবন্ধনে মূল বাছাই হয় লিখিত পরীক্ষায়। ভাইভা মূলত সনদপত্র ও মৌলিক কাগজপত্র যাচাইয়ের মাধ্যম। ভাইভায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর রাখা আছে সনদপত্র যাচাইয়ে। এ জন্য ভাইভার নম্বর কখনও মূল নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় না এবং তা মেধাতালিকায়ও কোনো প্রভাব ফেলে না। যে কারণে বিগত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে ভাইভাকে খুব কঠিন করে দেখতেন না প্রার্থীরা। সনদপত্র ও মৌলিক কাগজপত্র ঠিক থাকলে মৌলিক দু একটি প্রশ্ন করে ভাইভায় পাস করানো হয়েছে। আগের দুটি নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলেও তা স্পষ্ট।

১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষার ভাইভায় পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ পরীক্ষায় ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণদের যে ই-সনদ দেওয়া হয়েছে, তাতেও ভাইভার নম্বর উল্লেখ নেই। কেবল লিখিত পরীক্ষার নম্বর সনদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে এবং লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই মেধাতালিকা করা হয়েছে।চাকরিপ্রার্থী আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, যে ভাইভার নম্বর সনদপত্রে উল্লেখ থাকে না, নম্বর মেধাতালিকায় কোনো প্রভাব ফেলে না, কিন্তু ভাইভার অজুহাতে ২৩ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীকে এবার অমানবিকভাবে ফেল করানো হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, শুধু লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতেই যদি সনদপত্র দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কেন সনদপত্র পাব না?

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, এবার পরীক্ষায় বোর্ডভেদে প্রশ্ন কাঠামোয় ব্যাপক বৈষম্য করা হয়েছে। কোনো বোর্ডে প্রার্থীকে কেবল নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করেই পাস করানো হয়েছে, আবার কোনো বোর্ডে ১০-১৫টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও ফেল করানো হয়েছে। কী হয়েছিল ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফলের তালিকায় দেখা যায়, এক বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে একজন পাস করেছেন। অন্যদিকে আরেক বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন পাস করেছেন। ভুক্তভোগী মো. মিলন বলেন, এটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। ভাইভায় সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে।দেখা গেছে, গত ৬ ও ৮ মে অনুষ্ঠিত আরবি প্রভাষক পদে ১২০ জনের মধ্যে মাত্র ২০ জন পাস করেছেন। এক বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৫ জন অকৃতকার্য। ৫ মে অনুষ্ঠিত হিসাববিজ্ঞান ৬বি বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৭ জন ফেল, অন্য বোর্ডে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পাস। ২৬ মে অনুষ্ঠিত ফিকহ্ বিষয়ে ২০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২ জন পাস করেন। এই বিষয়ে ৫১ জন প্রার্থীর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ১৭ জন, যদিও পদ খালি ছিল ৫০টি।