বাংলাদেশে প্রস্তাবিত মানবাধিকার কার্যালয়ে যেসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের আজীবন দায়মুক্তি চায় জাতিসংঘ। পাশাপাশি এ কার্যালয়ের সব কার্যক্রমের দায় বাংলাদেশকে নিতে হবে। জাতিসংঘ প্রস্তাবিত খসড়ায় এমন শর্ত রাখা হয়েছে। তবে সরকার এ বিষয়ে এখনও সম্মতি দেয়নি। ফলে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত সমঝোতা স্মারক সই হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।ঢাকা বলছে, বাংলাদেশে যত দূতাবাস, হাইকমিশন বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয় রয়েছে, তাদের কারও এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়নি। এমনকি জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাকেও এ সুবিধা দেওয়া হয়নি। ফলে মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়কেও এ সুবিধা দিতে চায় না সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।বাংলাদেশে একটি মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে চায় জাতিসংঘ। এ কার্যালয় খোলার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে ঢাকা। বিষয়টি সামনে এগিয়ে নিতে উপদেষ্টা পরিষদ একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া সইয়ের জন্য অনুমোদন করেছে। তবে সমঝোতা স্মারক অনুমোদনের আগে জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। ঢাকা যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে, তার কোনো অনুলিপিও তাদের দেওয়া হয়নি। ফলে অনুমোদিত সমঝোতা স্মারকটি পর্যালোচনা করা ছাড়া সই করবে না জাতিসংঘ।
গত ৩ জুন জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো অংশগ্রহণ করে। বৈঠকে প্রস্তাবিত খসড়ায় থাকা ধারা ১৭(২), ১৯, ২০(৩), ২৩(৩), ২৪ ও ২৬ নিয়ে আপত্তি জানান অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা। এ ধারাগুলোর মধ্যে ২৪ ও ২৬ না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠক থেকে। পাশাপাশি খসড়ায় থাকা দায়মুক্তি ও প্রাধিকার-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ইতোমধ্যে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যত বিদেশি মিশন কাজ করতে এসেছে, সবাই হোস্ট কান্ট্রি অ্যাগ্রিমেন্ট -এর মাধ্যমে এসেছে। কারও সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সমঝোতা স্মারক সই হয়নি। ফলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার ক্ষেত্রেও আগের চুক্তিগুলো অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয় বৈঠকে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জাতিসংঘ সমঝোতার যে খসড়া পাঠিয়েছে, তাতে হোস্ট কান্ট্রি অ্যাগ্রিমেন্টের শর্তের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করেছে।সমঝোতা স্মারক সই হলে আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। ফলে আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হোস্ট কান্ট্রি অ্যাগ্রিমেন্ট প্রয়োজন। আর জাতিসংঘের সব সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের হোস্ট কান্ট্রি অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। তাহলে মানবাধিকার কার্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে কেন প্রশ্ন রাখেন তিনি।