NEWSTV24
পুরো গাজা দখলে নিতে ব্যাপক হামলা
শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৪৯ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

গাজা সিটি দখলের মাধ্যমে পুরো উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে ১২৩ জন নিহত হয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে এক দিনে এটি সর্বোচ্চ মৃত্যু। হামলার পাশাপাশি ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে অনাহারে প্রাণ গেছে আরও চারজনের। ত্রাণকে অস্ত্র না বানাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের শতাধিক সংস্থা।গত ২২ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে অন্যত্র চলে যেতে বলছেন। ইসরায়েলের টেলিভিশন আইটোয়েন্টিফোর নিউজকে তিনি বলেন, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না, বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। যারা ফিলিস্তিনিদের জন্য উদ্বিগ্ন ও সাহায্য করতে আগ্রহী, তাদের সবার উচিত দরজা খুলে দেওয়া।

রয়টার্স লিখেছে, আরব ও অনেক বিশ্বনেতা গাজার মানুষের এভাবে স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনায় বিস্মিত । আর ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এমনটা হলে তা হবে আরেকটি নাকবা (বিপর্যয়)। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বিতাড়ন করা হয়। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই গাজা সিটি দখলে সক্ষম হবেন। আলোচনা বারবার ব্যর্থ হলেও যুদ্ধবিরতি এখনও সম্ভব বলে জানান তারা।গাজা সিটির বাসিন্দারা বলছেন, আইডিএফ বিমান ও ট্যাঙ্ক দিয়ে গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। জেইতুন ও শেজাইয়াপাড়ায় রাতভর অনেক বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে। আল-আহলি হাসপাতাল জানিয়েছে, জেইতুনের একটি বাড়িতে বিমান হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বাংশেও। সেখানে ট্যাঙ্ক দিয়ে চালানো হামলায় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ধ্বংস হয়। মধ্য গাজায় দুটি পৃথক ঘটনায় ত্রাণকেন্দ্রে গুলিতে অন্তত ৯ ত্রাণপ্রত্যাশীর প্রাণ গেছে।
দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, এ হামলা-দখলের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরে আরও তিন হাজার বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন ইসরায়েলের কট্টরপন্থি মন্ত্রী বেজালাল স্মোট্রিচ। প্রভাবশালী দেশগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার মধ্যে তিনি এ সিদ্ধান্ত জানালেন। এসব বসতির কারণে পশ্চিম তীর থেকে বাস্তুচ্যুতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

অনাহারে মৃত্যু বাড়ছে বোমা, ট্যাঙ্কের গোলা ও বন্দুক হামলার পাশাপাশি গতকাল এক দিনে গাজায় অনাহার-অপুষ্টিতে তিন শিশুসহ আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে অনাহারে মৃত্যু ২৩৫ জনে পৌঁছাল, যাদের মধ্যে ১০৬ শিশু রয়েছে। এর আগে বুধবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি এক বিবৃতিতে বলেন, অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে কমপক্ষে ১০০ শিশু মারা গেছে। লাজ্জারিনির উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলা ও গোলাবর্ষণে ৪০ হাজারেরও বেশি শিশু হতাহত হয়েছে। কমপক্ষে ১৭ হাজার শিশু অনুষঙ্গহীন ও বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখ শিশু গভীর মানসিক ও শারীরিক আঘাত পেয়েছে। সেই সঙ্গে তারা শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।ত্রাণকে অস্ত্র বানানো বন্ধ করার আহ্বান শতাধিক সংস্থার গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কৌশল বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের শতাধিক সংস্থা। এক যৌথ বিবৃতিতে অক্সফাম ও মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সসহ (এমএসএফ) মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, তাদের প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের কঠোর নিয়ম মেনে না চললে তাদের ত্রাণ সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হবে না।

চিকিৎসার জন্য ৫৮০ জন ইতালিতে ইতালি জানিয়েছে, তারা গাজার আহত ও অসুস্থ ৫৮০ জনকে চিকিৎসার জন্য নিচ্ছে। তাদের মধ্যে ১৮০ শিশুও রয়েছে। এতে ইতালি হতে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে প্রথম দেশ, যারা চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে লোকজনকে সেখানে নিল। যুদ্ধবিরতি আলোচনা কি জীবিত গত বুধবার হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া কায়রোতে মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধ, ত্রাণ সরবরাহ ও গাজার জনগণের দুর্ভোগের অবসান নিয়ে কথা বলেন। হামাসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ শেষ করে ও প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তারা সব ধরনের মতামতের জন্য উন্মুক্ত।