ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য নতুন করে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সুযোগ নেই। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর অনেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় অস্ত্রের নতুন লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে আপাতত কাউকে অস্ত্র কিনতে লাইসেন্সের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত বছর বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়েছিল।সেই অস্ত্রের এক-তৃতীয়াংশ ফেরত দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আর বাকি অস্ত্র ফেরত দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে (২০০৯-২০২৪) দেশে ১৭ হাজার ২০০টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়।ওই সময় হত্যা মামলার আসামিদেরও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। পরে ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুমোদন দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদসহ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা পড়ে ১৩ হাজার ৩৪০টি। আর তিন হাজার ৮৬০টি অস্ত্র জমা পড়েনি। সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ও ঢাকা বিভাগে সাত হাজার ৫৫১টি। দ্বিতীয় খুলনা বিভাগে দুই হাজার ৩০০টি। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৯০০টি, সিলেট বিভাগে এক হাজার ১৫০টি।বাকি বিভাগগুলোতে দেওয়া হয় আরো পাঁচ হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স। সবচেয়ে কম অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচ শতাধিক।নির্দিষ্ট সময়ে যে অস্ত্রগুলো জমা দেওয়া হয়নি সেগুলো বর্তমানে অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিভিন্ন বাহিনী সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে। বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার পর গত বছর ৩০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে থানায় জমা নেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত দিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে সব জেলায় কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ইস্যু করা এবং যেসব অস্ত্র ফেরত দিলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে কমিটি মনে করে, সেই অস্ত্রগুলো ফেরত দেওয়া যাবে না। আর যাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা চলমান রয়েছে বা যাঁরা ফৌজদারি অপরাধে এরই মধ্যে দণ্ডিত হয়েছেন, তাঁঁদের অস্ত্রও ফেরত না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় জেলায় কমিটি গঠনের পর জমা পাওয়া ১৩ হাজার ৩৪০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ফেরত দেওয়া হয়েছে তিন হাজারের মতো অস্ত্র। বাকি অস্ত্র ফেরত দেওয়া হয়নি। অনেকের অস্ত্র ফেরত দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে।এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণার পর আর কাউকে আপাতত অস্ত্র ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব অস্ত্র ফেরত দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের আগে সেগুলোও জমা নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর যে অস্ত্রগুলো জমা রয়েছে সেগুলো নির্বাচনের আগে আর ফেরত দেওয়া হবে না। নির্বাচনের আগে ব্যক্তি পর্যায়ে কাউকে নতুন করে অস্ত্রের লাইসেন্সও না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কিছু লোক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। অনেকে তদবিরও করছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে আর কাউকে লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, যেসব অস্ত্র জমা রয়েছে সেগুলো আপাতত ফেরত দেওয়া হবে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যে অস্ত্রগুলো জমা পড়েছিল সেগুলো পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি এখানে যোগ দেওয়ার পর নতুন করে কেউ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেননি।