ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আগুন লাগার পর দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাত ৯টার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়। প্রায় সাত ঘণ্টা পর সোয়া ৯টার দিকে কার্গো ভিলেজে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। তবে দুর্ঘটনাস্থলে তখনও আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়।গত এক সপ্তাহে এ নিয়ে তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে আগুনে প্রাণ যায় ১৬ জনের। এর পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ইপিজেডে আগুনে একটি কারখানায় আগুনে সাততলা ভবন পুড়েছে।এদিকে, নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত। নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড ও সম্প্রতি কয়েক জায়গায় আগুন লাগার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।
বিমানবন্দরের আগুন নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহাম্মেদ খান বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে এর আগে কখনও এত বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি। যতদূর জেনেছি, কার্গো ভিলেজে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। আপৎকালীন কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। তাদের নিজস্ব কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে দেরি করেছেন। আবার সেখানে দাহ্য পদার্থও ছিল। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস যখন সেখানে পৌঁছায়, তার আগেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছে, সেখানে মূলত আমদানি করা পণ্য মজুত রাখা হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজ। এর ১২টি গেট আছে। এর মধ্যে হ্যাঙ্গার গেটের (৮ নম্বর) পাশে আমদানি কার্গো শাখায় আগুন লাগে। পরে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে যায়। কার্গো ভিলেজে আমদানি করা রাসায়নিকের গুদামও রয়েছে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট সেখানে যায়। আগুন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকায় একে একে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করে। সেই সঙ্গে যোগ দেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং বিজিবির সদস্যরা।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, কার্গো ভিলেজের কুরিয়ার শাখায় আগুনের সূত্রপাত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ সরকারের কোনো দপ্তর নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আনসার ও এপিবিএনের অন্তত ২৭ সদস্য।ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লাগে সেখানে কুরিয়ার সার্ভিসের কাজকর্ম চলে, তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পের জরুরি কাঁচামাল ছিল। বিশেষ করে আমদানি করা দামি মোবাইল ফোনও থাকে এই ভিলেজে। এখন সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। সব মিলিয়ে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়েছে।এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালালে বিমান ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্তত ২৪টি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সূচিতে তাৎক্ষণিক রদবদল আনতে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ থেকে যেসব ফ্লাইট ঢাকায় নামার কথা, সেগুলোকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কলকাতাসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বলা হয়। শাহজালালে থাকা সব বিমান আগুন লাগার পর পরই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, কার্গো ভিলেজে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে আকাশ। ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘটনাস্থলের বাইরের দিকে উৎসুক জনতার ভিড়। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলা হয়।কার্গো ভিলেজের বিপরীত পাশে পারভেজ কম্পিউটার দোকানের মালিক পারভেজ শেখ বলেন, দুপুর সোয়া ২টার দিকে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ দেখি কার্গো ভিলেজের ৮ নম্বর গেটের কাছে ধোঁয়া উঠছে। প্রথম দিকে হালকা ধোঁয়া ছিল। এর পর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া বের হয়। ক্রমেই ধোঁয়া বাড়তে থাকে। এর পর ফায়ার সার্ভিস এসে ভেতরে ঢোকে। আগুনের কারণে মহাখালী, বিমানবন্দর, উত্তরা ও আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়।