NEWSTV24
রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া, স্বস্তির আশা অর্থনীতিতে
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫২ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার বার্তা পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে দেশের রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া শুরু হওয়ার পাশাপাশি ভঙ্গুর অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান দূর হবে। রাজনীতি স্থিতিশীল থাকলে অর্থনীতির চাকাও সচল থাকে। গেল বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সঙ্গে ছন্দপতন হয় অর্থনীতিতেও। দেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো একমাত্র পথ নির্বাচন। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের গিট্টু ছিল জুলাই জাতীয় সনদ। সেই গিট্টু আলগা হতে শুরু করেছে। ফলে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে কাটছে অনিশ্চয়তার মেঘ।তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কোনো কারণে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনী ট্রেন মিস হলে দেশ ও বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। তাই দলগুলোকে দেশ ও নিজের স্বার্থে হলেও ভেদাভেদ ভুলে ভোটের দিকেই নজর দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে পরিকল্পনায় থাকা দেশগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। নির্বাচনের ওপরই নির্ভর করছে দেশের আগামীর পথরেখা। তাই ফেব্রুয়ারিতে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে। বিএনপি এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও কিছু বিষয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের বিষয়ে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। এর পরও বৃহত্তর অংশীদারত্ব নিয়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না জামায়াত। কারণ দলটি মনে করে, এবার দল হিসেবে জামায়াতের সামনে বৃহত্তর পরিসরে সংসদে যাওয়ার বড় সুযোগ এসেছে। ফলে কোনোভাবেই তারা নির্বাচনী ট্রেন মিস করতে চাইবে না। এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও নির্বাচন দিয়ে বৈতরণী পার হতে চায়। ফলে সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত প্রায় দেড় বছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় চরম অসন্তোষ নেমে আসে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মানুষের নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সবকিছু নিয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ নির্বাচিত সরকার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নুরুল আমীন ব্যাপারী  বলেন, বিএনপির মূল দাবি প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে প্রতিফলিত হয়েছে। কাজেই তাদের চাহিদা তারা পেয়ে গেছে। ফলে তাদের কোনো ক্ষোভ নেই বা চাহিদাও নেই। সেই ক্ষেত্রে ছোটখাটো যে বিষয়গুলো আছে এটা মনে হয় কোনো অসুবিধা হবে না গণতন্ত্রের স্বার্থে। বিরোধিতা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি দলগুলো। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীরও একটা দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। জামায়াতে ইসলামী বর্তমানে উদীয়মান অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাটা ধরে রাখার জন্য জামায়াতের উচিত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ট্রেন ধরা। অর্থাৎ নিজেদের স্বার্থেই দলগুলো নির্বাচনের বিষয়ে মনোযোগী হবে বলে মনে করেন তিনি।নুরুল আমীন ব্যাপারী বলেন, রাজনৈতিক যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, সেটা নির্বাচন ছাড়া কাটবে হবে না। নির্বাচন হয়ে গেলে এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় গেলে বাইরের যে পক্ষগুলো বর্তমানে সজাগ বা সতর্কভাবে কাজ করছে তারা স্তিমিত হয়ে যাবে। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে তারা সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইবে। তা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাচ্ছে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করা। বিএনপি যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচিত হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে, সুতরাং বিএনপির কথায় জামায়াত আস্থা রাখতে পারে। কিভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে তা নিয়ে দুই পক্ষকে বসতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ফলে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক এই মুখ্য অর্থনীতিবিদ আমাদের সময়কে বলেন, আপাতত মনে হচ্ছে যে গিট্টুগুলো ছিল নির্বাচনের পথে, সেগুলো খুলেছে। এটা আরও দুই একদিন পর ভালো বোঝা যাবে। আমার ধারণা, বড় বড় দল যারা মাঠে আছে, এখন তাদের নিজস্ব স্বার্থেই এবং অন্তর্বর্তী সরকারেরও নিজস্ব স্বার্থেই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক। শুধু জাতির জন্য না, দলগুলোর জন্যও। সেদিক থেকে একটা বড় অনিশ্চয়তা কাটার পথে। সেটা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একটা পূর্বশর্ত।