NEWSTV24
শেখ হাসিনার মামলার রায় আজ
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:০৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। এ মামলার রায় দেবেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।এর মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের প্রথম কোনো মামলায় বিচারের রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। মামলার অপর দুই আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের সাবেক আইজিপি। বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা হবে।রায় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বড় পর্দায় দেখানো হবে। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং তাদের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যম রায় সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য স্থাপিত হয়েছিল এই ট্রাইব্যুনাল। গত ১৪ বছরে ১৫৫ জনের বিচার শেষ হয়েছে এই ট্রাইব্যুনালে। সেই সময় বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গত বছরের ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচারকাজ চলে। এ মামলায় অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।গত ২৩ অক্টোবর উভয় পক্ষের শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারকার্য শেষ হয়। সেদিন রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে স্বচ্ছতা দাবি মির্জা ফখরুলের

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই দাবি জানান।বিএনপি মহাসচিব লেখেন, সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যেখানে গত বছরের ঢাকায় সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতা ও দমনপীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা পূর্ণ ন্যায়বিচার দাবি করছি।

প্রসিকিউশনের বক্তব্য

অভিযুক্তরা দণ্ডিত হলে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ভিকটিমদের পরিবারগুলোর মধ্যে বণ্টনের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আবেদন জানিয়েছেন প্রসিকিউশন। গতকাল রোববার প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের আইনের বিধান অনুযায়ীই এই আবেদন করা হয়েছে।তিনি বলেন, যেহেতু আইনে রয়েছে, তাই আমরা দোষীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করেছি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ দেবেন, প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে।প্রসিকিউটর আরও জানান, এই মামলায় শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন বিশ্বাস করেন, এ মামলায় আনা পাঁচটি অভিযোগই তারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন।রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে নারী হিসেবে কোনো রকমের সহানুভূতি বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে না।অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা, আমার মক্কেলরা খালাস পাবেন।

মামলার বিচার কার্যক্রম

চলতি বছর ১০ জুলাই অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শুরু হয় এবং ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। গত বছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভিযোগ গঠনের পর থেকে তিন মাস ১৩ দিনের মধ্যে বিচার শেষ হলো।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

২০১০ সালের মার্চে স্থাপিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেখানে এ পর্যন্ত একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ১৮৮ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় গত ১৪ বছরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৫৬টি রায় হয়। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ১৫৫ আসামির মধ্যে ১০৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের (ফাঁসি) রায় হয়। আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে ২৫ জনের, ১২ জনের যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ১২ আসামির। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক ৬২ জন।এর মধ্যে জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার শেষ হয়েছিল প্রায় ১০ মাসে। ২০১২ সালের ১৩ মে গোলাম আযমের মামলার অভিযোগ গঠন হয়। ১ জুলাই থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিচার শেষ হয়। এর পর দুই মাস ২৮ দিন পর ১৫ জুলাই রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারের রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন পলাতক আবুল কালাম আযাদের (বাচ্চু) মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছিল। ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এক মাস ২২ দিন (৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৬ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে রায় দেওয়া হয়।