দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার আগেই নির্বাচনবিষয়ক সব কার্যক্রম গুছিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। যেসব আসনে এখনও প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, সেগুলোতেও নাম ঘোষণার কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাগেরহাটের চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। কয়েক আসনে ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তন নিয়েও চলছে আলোচনা। সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার কৌশল নির্ধারণে সারাদেশের বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে সাত দিনের তথ্য-প্রচার কর্মসূচি শেষ করেছে বিএনপি। এর বাইরে তিন দফায় দেশের ২৭৬ আসনে মনোনীত প্রার্থীর কর্মশালাও শেষ করেছে দলটি। এসব কর্মশালায় ফ্যামিলি কার্ড, হেলথ কার্ড, কৃষি কার্ড কীভাবে কৃষককে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে বিএনপির ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রার্থীকে নির্বাচন-সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে নির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিরা। এর মধ্যে নির্বাচনী এলাকার কেন্দ্র এবং আসনভিত্তিক তালিকা কীভাবে ভোটারের কাছে পাঠাবে, প্রচারণা চালাবে সেসব বিষয়ে তুলে ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বক্তব্য দেন। গতকাল প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে ভোটের মাঠে করণীয় এবং প্রচার-প্রচারণা, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ-পূরণ, জমাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। বিশেষ করে নির্বাচনে জিততে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা এবং জনসম্পৃক্ত অতিগুরুত্বপূর্ণ আট দফা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেসব বিষয়ে আরও সহজভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সব প্রার্থীর কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা করে দলীয় মনোনয়ন ফি জমা নেওয়া হয়েছে। বৈঠকগুলোতে তারেক রহমান বলেন, আমি ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত প্রত্যেককেই সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই। এ জন্য আমি ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষায় থাকব। ধানের শীষের সবাইকে বিজয়ী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট কিছু তথ্য নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি নির্বাচনী আসনের জন্য মনোনীত এজেন্ট এবং পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম এমন দুজন ব্যক্তির নাম। পাশাপাশি সংসদীয় এলাকার জন্য প্রার্থীর মনোনীত একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের নামও জমা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে চিঠিতে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির নাম, পদবি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, সচল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সঙ্গে আনার নির্দেশনা ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটের দিন কেন্দ্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, এজেন্টদের প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল প্রচারণা আরও সুসংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এই কর্মশালার পর নেতাকর্মীরা ঘরে-ঘরে গিয়ে ভোটারের কাছে বিএনপির পরিকল্পনা পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছেন। ব্যাংকের ঋণ ও অন্য আইনি ঝামেলা আছে এমন প্রার্থীর বিকল্প প্রার্থীও ঠিক করছে বিএনপি। তবে খুবই সীমিত আসনে এ পরিবর্তন আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। নেতারা জানান, গত বুধবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। প্রথম দিন রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ১০৭ প্রার্থীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করেন তারেক রহমান। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের ১১০ প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। গতকাল শনিবার ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৯৪ প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক হয়। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুরু হওয়া বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেন তারেক রহমান। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আর্লি ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর পরিচালনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা রেহান আসাদ। এবারের নির্বাচনে প্রচারণায় ভিন্নতা আনার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে দলটি। ইতোমধ্যে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গুলশানে একটি অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে।