রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে শীতের দাপট। পৌষের শুরুতেই উত্তুরে হাওয়া, কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সারাদেশেই। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এখনও দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে না। তবু তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ঢাকাসহ সব জেলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। নদীর অববাহিকা ও উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা দেখা যায়। অনেক জায়গায় সূর্যের দেখা মিলেছে দেরিতে। শীতের এ আকস্মিক তীব্রতায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, শৈত্যপ্রবাহের জন্য টানা দুই দিন বা তার বেশি সময় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকতে হয়। আপাতত দেশের কোথাও সেই পরিস্থিতি নেই। তবে উত্তুরে হাওয়ার কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে।আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমারও আশঙ্কা রয়েছে। দিনের বেলায় আবহাওয়া মূলত শুষ্ক থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। একই সময়ে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ পরিস্থিতির প্রভাবেই দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় কুয়াশা ও শীতের অনুভূতি বাড়ছে।চুয়াডাঙ্গায় ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকালবেলা কিছু সময় রোদের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমছে না। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর চাপও বেড়েছে। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ বয়োবৃদ্ধ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামিনুর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। মাসের শেষ দিকে বা নতুন বছরের শুরুতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রামে এখনও শৈত্যপ্রবাহ শুরু না হলেও হিমেল বাতাস, ঘন কুয়াশা আর শিশিরে জবুথবু জনজীবন। জেলার ১৬টি নদীর চরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। শীতবস্ত্রের সংকট সেখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতভাগ, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, চলতি শীতে জেলার ৯ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।রাজশাহীতেও শীতের তীব্রতা বাড়ছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারী তারেক আজিজ জানান, বৃহস্পতিবার সূর্য ওঠে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে। তবে ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৮টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। বাতাসে আর্দ্রতা প্রায় শতভাগ থাকায় শীতের অনুভূতি আরও বেড়েছে। আগামী কয়েক দিনে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকায় শীত আরও বাড়তে পারে।
ঘন কুয়াশার কারণে রাজশাহী ও আশপাশের এলাকায় সড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। অনেক গাড়িকে ফগ লাইট জ্বালিয়ে চলতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করেই ভোরে কাজে বের হতে হয়েছে তাদের।আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিন দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। একই সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। শৈত্যপ্রবাহ শুরু না হলেও এই ঠান্ডায় ইতোমধ্যে জনজীবনে বাড়ছে দুর্ভোগ এটাই এখন সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।