চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারিআমিরাতে বৃষ্টিতে গাড়িতে আটকা পড়ে মারা গেলেন দুই জন সেরেলাক-নিডোয় অতিরিক্ত চিনি, পরীক্ষা করবে বিএফএসএজাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্রভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু
No icon

শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে

কভিড-১৯ মহামারির কারণে পাঁচ মাসের বেশি সময় দেশে সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওপরও একই প্রভাব পড়তে পারে। ইতোমধ্যে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া উচ্চশিক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা বিকল্প হতে পারত। কিন্তু আমাদের শিক্ষা কাঠামো এখনও সেই অবস্থানে যায়নি। সরকার সারাদেশের স্কুল-কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই টাকা যে সঠিক জায়গায় ব্যয় হয়নি তা এই করোনাকালে অনেকাংশে প্রমাণ হয়েছে। এসব প্রকল্প যদি ভালোভাবে বাস্তবায়িত হতো তাহলে হয়তো এই সময়ে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো।এখন পুরো একটি শিক্ষাবর্ষই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না ঘটলে শিক্ষাবর্ষের সময় কমিয়ে আনতে হবে। এর সঙ্গে ছুটিও কমাতে হবে। এক বছরে দুই শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হবে। অটো প্রমোশন দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করে যতটুকু পড়ানো হবে তার ওপর পরীক্ষা নিতে হবে। একইভাবে এসএসসি পরীক্ষাও নিজ নিজ স্কুলে গ্রহণ করা যেতে পারে। ইউরোপের অনেক দেশে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা নিজেদের স্কুলেই দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে আগে থেকেই এই পদ্ধতি চালু থাকলে খুব বেশি সংকট হতো না। এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হলে বিকল্প উপায়ে রেজাল্ট দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট বিবেচনায় আসতে পারে। অনেক কলেজে প্রথমবর্ষ ও দ্বিতীয়বর্ষ শেষে সমাপনী পরীক্ষা হয়। এই দুই পরীক্ষার ফলাফল গড় করেও চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া যেতে পারে। এই ফলাফল নিয়েই তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করতে হবে। কে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য চেষ্টা করতে পারে সেই পরামর্শ শিক্ষকদের কাছ থেকে আসতে হবে। করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিতে হবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। মেডিকেলে এই ব্যবস্থা চালু আছে।

এই ব্যবস্থা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করা যেতে পারে। ড. জাফর ইকবাল এ বিষয়ে অনেক পরামর্শ ইতোপূর্বে দিয়েছেন। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীকালে এক পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার নামে যে বাণিজ্য হয়ে থাকে এই করোনাকালে তা বন্ধ করার সুযোগ এসেছে। দীর্ঘদিন থেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অবহেলিত রাখার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে এই করোনাকালে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খুব বেশি পড়াশোনা হয় না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে কোচিং সেন্টারে যাওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। ক্লাস না হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান পরীক্ষাসর্বস্ব হয়ে পড়েছে। এর কারণ আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। কোথাও কোথাও ক্লাস করার কক্ষ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক আছে কিন্তু তাদের বেতন নেই। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যত্রতত্র খোলা হচ্ছে অনার্স কোর্স। ভালো কলেজগুলো থেকে যোগ্য শিক্ষকদের বদলি করে তাদের স্থলে প্রভাবশালীদের স্বজন বসানো হচ্ছে। এছাড়া নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে।/> আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। ফলে আমাদের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। এখানে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয় কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় না। কিছুদিন আগে একটি প্রকল্পের অধীনে ভালো রেজাল্টধারী গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল সেই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে, কিন্তু পরে ওই শিক্ষকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করলেও তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। শিক্ষানীতির তোয়াক্কা না করে পিইসি বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী নামক পরীক্ষার উদ্ভব হয়েছে। পিইসিতে সর্বাধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থী থাকায় সেখান থেকে আর্থিক সুবিধা পায় অনেকে। ফলে এত বাধা-বিপত্তি-প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে না। এ বছর করোনা এই পরীক্ষা বন্ধ করতে পেরেছে, আগামীতে এ পরীক্ষা বন্ধ হবে কিনা তা বলা যায় না।