চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারিআমিরাতে বৃষ্টিতে গাড়িতে আটকা পড়ে মারা গেলেন দুই জন সেরেলাক-নিডোয় অতিরিক্ত চিনি, পরীক্ষা করবে বিএফএসএজাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্রভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট শুরু
No icon

চাকরির আবেদন ফি মওকুফ করুন

বহুদিন দেখা নেই ওদের সাথে। করোনার জন্য নিজ নিজ গ্রামেই ছিল তারা। ক্যাম্পাস খোলার সুবাদে একের পর এক কুশল জিজ্ঞাসা করতে আসছে ওরা আমার অফিসে। তারপর, ওদের-কেমন আছ তোমরা সবাই- বলতেই অনেকের মুখে নানা নতুন কথা শোনা গেল। অনেকে গল্প শুরু করলো অলস সময়ের করণীয় নানা বিষয় নিয়ে। অনেকে আবার একদম চুপ করে অন্যদের কথা শুনছিল। তবে একজন কিছুই বলছিল না, মনভারী করে দাঁড়িয়ে ছিল। স্বভাবতই আমার নজরটা তার দিকে গেল। ওকে তুমি কেমন ছিলে? জিজ্ঞাসা করতেই করুণ স্বরে উত্তরে জানালো করোনাকালে সে ভালো ছিল না মোটেই, আজও ভালো নেই সে।ওর কাছে জানা গেল, একদিনে (অক্টোবর ০৮) ১৪টি চাকরির লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হয়েছিল। কোনোরকমে দুটিতে অংশ নিতে পেরেছে। এসব চাকরিতে আবেদন করতে গড়ে প্রতি প্রার্থীর আড়াই হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। এতে তার ধার করা দুহাজার টাকা মার গেছে। ওর কথা শেষ না হতেই অন্যরা একই বিষয়ে কথা বলা শুরু করে দিল। তারা কেউ মাস্টার্স শেষ করে এমফিলে ভর্তি হয়েছে, কেউ মাস্টার্স শেষ করে বসে আছে। কেউবা অনার্স সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির আবেদন করেছে। তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে গেছে, সবাই কোনো না কোনো বিজ্ঞপ্তিতে নিয়মানুযায়ী চাকরির আবেদন করে পরীক্ষা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রায় দুবছর সবকিছু বন্ধ থাকার পর হঠাৎ হুড়মুড় করে সবকিছু একসাথে শুরু হওয়ায় তারা কোনটাতে কীভাবে অংশ নেবে সেজন্য সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

আমরা যতটুকু জানি টিউশনি করে বা ধার-দেনা করে অধিকাংশ চাকুরিপ্রার্থী এই যুদ্ধে অংশ নেয়। তাই এসব বেকারদের যে কোন চাকুরির আবেদন ফি ৫০ টাকার বেশি করা উচিত নয়। অথবা বিনা ফিতে চাকুরিতে আবেদনপত্র জমা নেয়ার জন্য সরকার এক মহতী ঘোষণার উদ্যোগ নিতে পারে। তাহলে একশ্রেণির জালিয়াত ও কুচক্রীমহলের চাকুরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দৈনিক পত্রিকায়, অনলাইনে দিয়ে বেকারদের সাথে প্রতারণা করা বন্ধ হবে।নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুদিনে ২২টি চাকরির পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হয়েছিল। এক চাকরিপ্রার্থী উচ্চশিক্ষিত যুবক আঙুলে গুণে গুণে হিসাব করে দেখাতে লাগলো। সবগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে রাজধানী ঢাকায়। ওরা ঢাকার বাইরের একটি বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে এবং করছে। সবাই মেধাবী। বিসিএস থেকে শুরু করে বড় বড় সব চাকরিতে ওদের অগ্রজরা আগেকার দিনে সাফল্যের পথ দেখিয়ে ওদের উৎসাহিত করে গেছে। ওরাও খুব আশাবাদী হয়ে চাকরিতে আবেদন করেছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ। একজন জানালো, সব পরীক্ষা ঢাকায় গিয়ে দিতে হবে কেন? করোনার ক্রিয়া তো এখনও শেষ হয়নি।

আয়ারল্যান্ডে আবারো লকডাউন দেয়া হয়েছে। সেখানকার বাংলাদেশিরা খুব ভয়ে আছেন। রাশিয়ায় আবারো ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু এখনও চলছে। নভেম্বরের ৪ তারিখেও ৭ জন করোনায় মারা গেছেন। ডেঙ্গু তো এখনও ভয়াবহ। এ অবস্থায় মানুষ মনে করছে- করোনা বিদায় নিয়েছে। আমরা এখন উন্মুক্ত জীবনে ফিরে গিয়েছি। মাস্ক পরা ছেড়েই দিয়েছে মানুষ। অথচ করোনার তৃতীয় ঢেউ গোটা ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে আবার জেঁকে বসতে শুরু করছে। টিকা নেওয়ার পরও সংশয় হলো- টিকার কার্যকারিতার মেয়াদ নিয়ে। তাই জার্মানিতে শুধু বৃদ্ধদের কথা বলা হলেও ইউরোপের অন্যান্য দেশে সবাইকে বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। চীনে ছোট ছোট বাচ্চাদের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। কারণ ওদের স্কুলগামী বাচ্চারা সংক্রমিত হওয়ার পর ওরা খুব উদ্বিগ্ন। অথচ আমরা সে বিষয়ে মোটেও আগাম কিছু ভাবছি না।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নেয়া হলো। অথচ চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পুনরায় ঢাকামুখী মানুষ ছুটছে গণপরিবহনে গাদাগাদি করে বসে। কেউ যাচ্ছে কক্সবাজার বা টেকনাফ থেকে কেউবা লালমনিরহাটের বুড়িমারী বা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা থেকে। পোশাক শিল্প বা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের জন্য গ্রামের হাট-বাজারে গিয়েও দালালরা ঘোষণা দিচ্ছে। অনেকে এসব ঘোষণায় পুলকিত হয়ে নতুন জীবিকা লাভের আশায় ছুটছে ঢাকায়। গ্রামে ধানকাটার সৌসুম শুরু হয়েছে, অথচ এসময় কৃষিশ্রমিকরা ছুটছে রিকশা-অটো চালাতে বড় শহরে। এভাবে আবারো আগন্তুক মানুষেরা গিজ গিজ করছে ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে।

সামনে আসছে ধুলোবালু মিশ্রিত নির্মাণকাজের শুকনো দিন। শহরে দেশি-বিদেশি মানুষের চলাচল বেড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত ও অসতর্কতায় এসময় বৈশ্বিকভাবে পুনর্জাগরিত করোনার তৃতীয় ঢেউ আমাদের দেশে শুরু হলে আমরা নিজেদের সামলাতে পারবো তো? কারণ টিকা প্রদান বা গ্রহণ সবিশেষ সমাধান নয়, চিরস্থায়ী নিরাপত্তাও নয়। সংক্রমিত জন থেকে নিরাপদ দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে সতর্ক চলাফেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করাটাই হচ্ছে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। সম্প্রতি রাশিয়ায় সাপ্তাহিক ছুটিতে সেখানকার জনগণের বেপরোয়াভাবে বিদেশ ভ্রমণ ও মাস্ক না পরার আন্দোলনকে করোনার পুনঃসংক্রমণের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের এ সতর্কতার বিষয়টি ভুলে গেলে মহাবিপদ ঘটতে দেরি হবে না।