NEWSTV24
কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বেকার তরুণরা
শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৫:৩১ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

দেশে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ। কর্মসংস্থান না থাকায় এদের দুই-পঞ্চমাংশের বেশি অলস সময় পার করছেন। প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা না থাকায় তরুণদের বড় অংশ কাজে যোগ দিতে পারছে না। সরকারও এদের জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারছে না। সরকারি চাকরিতে মানুষের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখনো ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি পদ শূন্য। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের বেশি।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। নতুন নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে না। ফলে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থারও পরিবর্তন প্রয়োজন। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। আবার শিক্ষার্থীদেরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষার অভাব এবং অনভিজ্ঞতাই তরুণদের বেকারত্বের মূল কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২ জরিপে উঠে এসেছে, দেশের মোট যুব জনশক্তির দুই-পঞ্চমাংশের বেশি (৪০.৬৭ শতাংশ) কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের (এনইইটি) কর্মসূচিতে নেই। মেয়েদের মধ্যে এ হার ৬১.৭১ শতাংশ। যা পুরুষের তুলনায় ১৮.৫৯ শতাংশ বেশি। দেশের সব বিভাগ এবং পল্লী ও শহরাঞ্চলে নিট জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি প্রায় একই রকম। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে সর্বাধিক নিট ৪৩.৯৮ শতাংশ যুব জনশক্তির উপস্থিতি মিলেছে। আর বরিশাল বিভাগে মিলেছে সর্বনিম্ন ৩৮.৩২ শতাংশ।

শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণে বাইরে থাকা (নিট) তরুণ জনগোষ্ঠী বলতে জনসংখ্যার সেই প্রাপ্তবয়স্ক অংশকে বোঝায় (১৫-২৪ বছর), যারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ কোনো কিছুতে সম্পৃক্ত নেই। যুব নিট জনগোষ্ঠীর হিসাবটি বর্তমান বিশ্বে যুব শ্রমশক্তির নিষ্ক্রিয় অংশের সংখ্যা জানার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরে তাদের চিহ্নিত করে শ্রমশক্তিতে নিয়োগ, শিক্ষায় প্রবেশ ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয়। এটি শ্রমবাজারে নিযুক্ত ও শ্রমবাজারের বাইরে থাকা সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তির বিষয়ে ধারণা দিয়ে থাকে। মূলত ১৫-২৪ বছর বয়সী নিষ্ক্রিয় জনসংখ্যাকে এনইইটি দিয়ে বোঝানো হয়।আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ২১.৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে এনইইটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আর বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ এনইইটি ক্যাটাগরিতে পড়ে।আইএলও বলছে, যারা সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত ৩০ দিন ধরে কাজ প্রত্যাশী ছিলেন, তারা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলাদেশপরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই নিয়মে বেকারের হিসাব দেয়।

এদিকে গত মে মাসে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে নতুন করে বেকার হয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার জন। এই তিন মাসে নারী ও পুরুষ উভয় জনসংখ্যার মধ্যেই বেকারত্ব বেড়েছে। তবে গত বছরের একই প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, সার্বিক বেকারত্ব হার একই রয়েছে। কিন্তু পুরুষের বেকারত্ব বেড়েছে এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা কমেছে। তবে ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশের বেকারত্বের হার বেড়েছে ৩.৫১ শতাংশ। দেশে এখন কর্মহীন লোকের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার জন, যা ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার।বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। তাদের ১৩-১৪ লাখের দেশে কর্মসংস্থান হয়। বাকিরা দেশের বাইরে যান। গত দুই দশক ধরে বেকারের সংখ্যা ২৪ থেকে ২৮ লাখের মধ্যে রয়েছে।গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের (বিআইডিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ বেকার।এ বিষয় জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বেকারত্ব কমাতে হলে বেসরকারি খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লেই নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে জিডিপি ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বেসরকারি খাতে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামোর উন্নতি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দমন করতে পারলে বেকারত্ব কমে আসবে। এর বাইরেও দক্ষ করে বড় একটি অংশ যদি দেশের বাইরে পাঠানো যায়, তাহলেও বেকারত্ব কমতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষভাবে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে শ্রমশক্তি তার কতটুকু আমরা কাজে লাগাতে পারছি, সেটাই মূল বিষয়। প্রত্যেক বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় দশ লাখের বেশি জনশক্তি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি খাতে প্রায় ৫ লাখ যুক্ত হচ্ছে। কর্মের সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না বলে প্রত্যেক বছর প্রায় ৫-৬ লাখ কর্মহীন অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। আবার যারা কর্মে যাচ্ছে সে খাতে সমস্যা রয়েছে। আমাদের টেকনিক্যাল ও ভোকেশনালের দিকে ফোকাস নেই। সবাই বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। দেশের বাজারে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। কারণ সেভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে না। যেগুলো হচ্ছে তা অটোমলাইজেশন। সেখানে প্রয়োজন দক্ষ লোকের। কিন্তু সেই লোক আমাদের নেই। জোগান দেওয়ার মতো জনশক্তি আমরা তৈরি করতে পারছি না। সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, প্রশাসক হতে চায়।দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়ার কারণ হিসেবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হয়রানি যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে বিনিয়োগ করতে এসে উদ্যোক্তাদের একশবার ভাবতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না। কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে না।