NEWSTV24
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর ফের বৈঠক আজ
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫ ১৭:২৬ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক চলমান। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় শর্তসাপেক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে প্রাথমিক ঐকমত্য হয়েছে। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে। দুই দিনের বিরতির পর আজ ফের সংলাপ শুরু হচ্ছে। ধারাবাহিক আলোচনার মধ্য দিয়ে দ্রুত সংস্কার চূড়ান্ত করতে চায় ঐকমত্য কমিশন।এর আগে গত রবিবার বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই সংলাপ চলে। কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের সপ্তম দিনের আলোচনার বিষয় ছিল-সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, উচ্চকক্ষের নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা। এ ছাড়া আগের দিনের কয়েকটি বিষয়ে অসমাপ্ত আলোচনা নিয়ে আবার আলোচনা হয়।আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিপূর্বে সংবিধিবদ্ধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। এ প্রস্তাবে ঐকমত্য না হওয়ায় এনসিসির পরিবর্তে একটি নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয় কমিশন। কিন্তু আলোচনায় এই কমিটি গঠনের পক্ষেও ঐকমত্য হয়নি।

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সম্পন্ন করতে এনসিসির পরিবর্তে নিয়োগ কমিটির প্রস্তাবকে অধিকাংশ দল স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এখনও যেসব রাজনৈতিক দল একমত হয়নি, প্রস্তাবটিতে কয়েকটি সংশোধনের পর তাদের আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, তারা পুনর্বিবেচনা করবে। আমরা আশা করছি, পরবর্তী আলোচনায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জুলাই মাস। এই মাসের মধ্যেই কমিশন জাতীয় ঐকমত্যের একটি সনদে পৌঁছাতে চায় বলেও জানান আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, আবু সাঈদের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাই মিলে এই সনদে স্বাক্ষর করতে পারব। সেটা এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। আমরা হয়তো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। তারপরও আমাদের বিশ্বাস, জুলাই মাসের মধ্যেই আলোচনার একটি পরিণতি টানা সম্ভব হবে।এদিকে আজকের আলোচনায়ও নতুন কোনো বিষয় রাখা হয়নি। আগের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অক্টোবর মাসে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার। বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ে সুপারিশ ছিল ২০টি। স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন।তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়। মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।