রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ফলে নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ ও আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগই মৌসুমি জ্বর। তবে এর মধ্যে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনা রোগীর সংখ্যাও কম নয়। এ বছর জানুয়ারি থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৪৫৬ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মে মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮০৪ জন। আর জুলাইয়ের প্রথম তিন দিনেই ১ হাজার ১৬০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময় তিনজন মারা গেছেন।গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই মাসের তিন দিনে মোট ১ হাজার ১৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন তিনজন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩৫৮ জন। এর মধ্যে ১৫০ জনই বরিশাল বিভাগে, শহরের বাইরে। এই সময় মারা গেছেন একজন। এখন দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৩২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৩৫১ জন ঢাকায়, আর ৯৭৮ জন ঢাকার বাইরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারিতে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন। জানুয়ারিতে মারা যান ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে সাতজন, মে মাসে তিনজন। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট ৪ হাজার ৩৪৫ জন। মারা যান ২৩ জন। কিন্তু শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত হন ৫ হাজার ৮০৪ জন। মারা যান ২০ জন।ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুটি আলাদা প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রথমবার ফি নির্ধারণ করা হয়। মেয়াদ ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। নতুন প্রজ্ঞাপনে এই সময় বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফি ৫০ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে এই ফি ৩০০ টাকা। সিবিসি পরীক্ষার ফি ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা।
বাংলাদেশকে ১৯ হাজার কিট দিল চীন
বাংলাদেশকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীনের পক্ষ থেকে ১৯ হাজার কিট দেওয়া হয়েছে। এই কিট দিয়ে ডেঙ্গু ছাড়াও এডিস চিকুনগুনিয়া রোগও শনাক্ত করা যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে চীনা দূতাবাসের ডেপুটি মিশন চিফ লিউ ইউইন জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও সহায়তা দেবে তারা। একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু মোকা?বিলায় সরকা?রের প্রস্তু?তি রয়ে?ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে রোগী বাড়লে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হতে পারে। ডেঙ্গুর হটস্পট জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে বলেও জানান ডা. সায়েদুর রহমান।