NEWSTV24
উচ্চ-নিম্নকক্ষের কোথাও পিআর চায় না বিএনপি
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫ ১৪:৪৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

জাতীয় সংসদের উচ্চ ও নিম্ন কোনো কক্ষেই ভোটের আনুপাতিক হার (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন বা আসন বণ্টন চায় না বিএনপি। সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চেয়ে আসছে দলটি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী সংলাপেও ফের তাদের আগের এ অবস্থানই তুলে ধরবে বিএনপি। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে উচ্চকক্ষ বাতিলের প্রস্তাব করলে বিরোধিতা করবে না বিএনপি।বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০ নারী আসন ঠিক রেখে জাতীয় সংসদের তিনশ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশে সরাসরি ভোটে নারীদের মনোনয়ন দিতে রাজি বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চায় দলটি। পরবর্তীকালে চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা বেড়ে ১০ শতাংশ করার পক্ষে তাদের অবস্থান।গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে দুই দফায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ইস্যুতে আরও পর্যালোচনা করবে বিএনপি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে ৩১ দফার আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটি রক্ষা করবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করবে দলটি।ঐকমত্য কমিশনার সর্বশেষ বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলো- যারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী- তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা প্রস্তাবটি রেখেছিলাম। সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম।এর আগে, ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে গত সপ্তাহের সোমবার ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করলেও তা সরাসরি নাকচ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অধিকাংশ দল। এর পরদিন অর্থাৎ গত মঙ্গলবার কমিশনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি দল প্রস্তাব করে সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ ২১টি দল ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে। কয়েকটি দল এমন প্রস্তাবও করেছে যে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে সেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষেরই দরকার নেই।

দীর্ঘ আলোচনায়ও সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এমতাবস্থায় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহের সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কমিশন মনে করে, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে।অন্যদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে সংসদের উচ্চকক্ষের মতো নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি দলগুলো। কমিশনের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে ঐকমত্য না হওয়ায় গত সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে, ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে। বিএনপি আগের মতোই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোনো দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যার অনুপাতে। জামায়াত জানায়, পিআর পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি বলে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের কথা।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে ঘূর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচন করলে দেখা যাবে, একটি আসনে কোনো দলের প্রভাবশালী নেতা আছেন। তার আসনটি নারী আসন হলো। তখন তিনি তার স্ত্রী বা পরিবারের অন্য কোনো নারীর মনোনয়নের ব্যবস্থা করবেন। ফলে এখানে পরিবারতন্ত্র হবে। ৬০০ আসন করে ৩০০ নারীকে দিলেও পরিবারের প্রভাবের বাইরে যাওয়া অসম্ভব। আবার কোটা না করে সাধারণ আসনে ৩৩ শতাংশ নারীর মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করলে দেখা যাবে, যেসব আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেসব আসনে রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মনোনয়ন দেবে। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার সবার আগে।বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদে নারী সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা অভিমত দেন, তারা নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ১০০টির মধ্যে ৫০টি নারী আসন সংরক্ষিত চাইবে। আর বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০ শতাংশ মানে ৩০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না।বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তেমন অর্থবহ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়বে।বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য  বলেন, সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করলে তা সংসদীয় পদ্ধতি থাকে না। ভারতসহ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংবিধান পর্যালোচনা করলে তাই দেখা যাবে। তাই, আগামীতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কিংবা সংসদীয় সরকার- যে পদ্ধতিই করা হোক, সরকারপ্রধানকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। তবে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি; আগামীতে আরও আলোচনা হবে।