NEWSTV24
একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি, ষড়যন্ত্র দেখছে বিমান
শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:০৫ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

চলতি বছর জুলাই মাসে অন্তত ১৬ বার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একাধিক ফ্লাইট। বেশির ভাগ ত্রুটিই ধরা পড়েছে উড্ডয়নের পর। ফলে গন্তব্যে না গিয়ে মাঝপথেই ফেরত আসতে হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ফ্লাইট শিডিউলে এবং খেসারত দিতে হচ্ছে যাত্রী ও বিমান কর্তৃপক্ষকে। এসব যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিমান কর্তৃপক্ষ। কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়েই কেন একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গেল তা চিন্তার বিষয়। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। কে বা কারা ষড়যন্ত্রে যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে।গত ১ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত বিমান উড্ডয়নে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি মূল্যায়ন ও তদন্তের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ কমিটির আহ্বায়ক বিমানের কারিগরি প্রধান ক্যাপ্টেন তানভীর খুরশিদ। সদস্য সচিব বিমানের ডিজিএম মিজানুর রহমান। অন্য দুজন সদস্য জিএম মিয়াজানুর রশিদ ও ডিজিএম শহিদুল ইসলাম।

কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমস্ত কারিগরি ত্রুটির মূল কারণগুলো তদন্ত ও শনাক্ত করা। রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড এবং পরিচালন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা। প্রতিটি ফ্লাইটে কারিগরি সমস্যার কারণ এবং দায়িত্ব (যদি থাকে) চিহ্নিত করা। এ ধরনের ত্রুটির পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা।বিমান সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গত বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে বিমানের জনসংযোগ বিভাগের জিএম এবিএম রওশন কবির বলেন, পরপর বিমান ত্রুটির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে। তারা প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করে রিপোর্ট দেবে। রিপোর্টে কারও দায়িত্বে গাফিলতি প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিমানের গত মাসের তথ্য বলছে, গত ১ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুরসহ একাধিক রুটে মাঝ আকাশে বা উড্ডয়নের আগে উড়োজাহাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেট বিকল, কোথাও ইঞ্জিনে ত্রুটি, আবার কোথাও রানওয়েতে আটকে পড়েছে উড়োজাহাজ। এতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, সংযোগ ফ্লাইট মিস এবং গন্তব্যে যেতে না পারার ঘটনা ঘটেছে।গত মাসের ১০ আগস্ট রোমের লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার ডানার ফ্ল্যাপ ত্রুটির কারণে গ্রাউন্ডেড হয়। লন্ডন থেকে যন্ত্রাংশ এনে মেরামতের আগে ২৬২ জন যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়। পরদিনই ড?্যাশ-৮ মডেলের একটি উড়োজাহাজের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে।আগস্টের শুরুর দিকেও তিনটি উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা দেয়। এর মধ্যে ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিন কম্পনের কারণে ফিরে আসে, ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী বোয়িং টয়লেট বিকল হয়ে ঢাকায় ফেরে এবং ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পথে বোয়িংয়ে সমস্যা হয়।

গত জুলাই মাসেও বিমানের উড়োজাহাজে কয়েকটি বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে, যার মধ্যে দুবাই ও শারজায় ড্রিমলাইনার ও বোয়িং উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হওয়ার ঘটনা রয়েছে।এভিয়েশন বিশ্লেষকদের মতে, এসব ঘটনার মূলে বিমানের প্রকৌশল বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের অবহেলা ও দায়সারা দায়িত্ব পালন। অভিযোগ রয়েছে, এ বিভাগের অনেক কর্মকর্তা প্রকৃত কারিগরি জ্ঞান ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় না আনা এবং অভ্যন্তরীণ তদারকির ঘাটতিও বড় কারণ হয়ে উঠেছে।এর আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা   বলেছিলেন, বিমানের প্রধান প্রকৌশলী এআরএম কায়সার জামান দুই মাস ধরে হাঙ্গেরিতে আছেন। বিমানে একের পর এক ত্রুটি ধরা পড়লেও কর্তৃপক্ষ জামানকে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে উদাসীন। এটা নিয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তিনি দাবি করেছিলেন, বিমানের কোনো কর্মকর্তা বিদেশে অবস্থান করলে ঘণ্টাপ্রতি ৩০-৪০ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ বিমান কর্তৃপক্ষ বহন করে। এই ডলারের লোভে তিনি নিজ দায়িত্ব ফেলে রেখে বিদেশে অবস্থান করছেন।বর্তমানে বিমানের বহরে ১৯টি উড়োজাহাজ আছে। এর মধ্যে ১৪টি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং এবং ৫টি কানাডার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের। বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে : ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার।