NEWSTV24
গাজা শহর ত্যাগের নির্দেশ জারি, কয়েক ঘণ্টা ধরে বিমান হামলা
শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:০৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

ফিলিস্তিনের গাজা শহর খালি করতে যে পরিকল্পনা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে এখন পুরোদমে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তারা সব ফিলিস্তিনিকে গাজা শহর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বাসিন্দাদের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে, নির্দেশ না মেনে শহরে অবস্থান করলে তাদের হামাসের লোক হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়াই করবে সামারিক বাহিনী।এ অবস্থার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবারও গাজা ভূখণ্ডজুড়ে অন্তত ৩৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ করছে হামাস। তারা আরও সময় চেয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে শহর ছাড়ার নির্দেশ গাজাবাসীর জন্য চরম আতঙ্কের হয়ে উঠেছে।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ওই আলটিমেটাম দেন। এক এক্স পোস্টে তিনি বলেন, গাজার বাসিন্দাদের জন্য দক্ষিণে চলে যাওয়ার এটিই শেষ সুযোগ। যারা গাজায় থাকবে তারা সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত হবে।

হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এপিকে বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবে কিছু বিষয় রয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য এবং সংশোধন করা উচিত। তিনি বলেন, অন্যান্য ফিলিস্তিনি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরই শুধু আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও লাখ লাখ বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে যায়নি। তাদের মধ্যে অনেকের ঘরাবড়ি ছেড়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই, অথবা দক্ষিণে তাঁবু শিবিরে যেতে তারা ভয় পাচ্ছে। কারণ সেখানে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। বাস্তুচ্যুত গাজার বাসিন্দারা প্রতিদিন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে।বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এবং কামানগুলো গাজার বিভিন্ন এলাকায় আঘাত করেছে। দক্ষিণ গাজা শহরের আল-সাব্রা পাড়া ও খান ইউনিসের পূর্ব উপকণ্ঠে হামলা হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিম গাজা শহরের আল-নাসর পাড়া এবং মধ্য গাজার মাগাজি ক্যাম্পে কামানের গোলা পড়েছে।গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা হুসেইন আল দেল বলেন, ইসরায়েলিরা কারও প্রতি দয়া না দেখিয়েই এলোপাতাড়ি হামলা চালাচ্ছে। আমরা আমাদের খাবার, আসবাব, কম্বল এবং সব কিছু রেখে এসেছি। আমরা শুধু আমাদের জান নিয়ে চলে এসেছি। বাড়ি থেকে আমরা খালি পায়ে বেরিয়ে এসেছি।গত ২৪ মাসে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৬ হাজার ১৪৮ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৮ হাজার ৭১৬ জন আহত হয়েছেন। আরও হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবিক পরিস্থিতির অবনতি
রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে গাজা শহরে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স এই সপ্তাহের শুরুতে গাজায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বুধবার আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে কয়েক ডজন মানুষ ফিলিস্তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ইয়াহিয়া বারজাকের জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি তুরস্কের সম্প্রচার সংস্থা টিআরটিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি গুলিতে ১৮৯ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মী নিহত হয়েছেন।

শান্তি প্রস্তাব পর্যবেক্ষণে আরও সময় চেয়েছে হামাস
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ করছে হামাস। তবে তারা মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের কাছে আরও সময় চেয়েছে বলে দেশ দুটিকে অবহিত করেছে। বুধবার মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবে কিছু বিষয়ের ওপর আরও আলোচনার প্রয়োজন। এক দিন আগে কাতারও একই মন্তব্য করেছিল। গত সোমবার ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করে।