দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েডের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে আজ। মাসব্যাপী এই টিকা প্রদান কর্মসূচি চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে বিনামূল্যে একটি ডোজ ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। জন্মসনদ নেই- এমন শিশুরাও এই টিকা পাবে।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম প্রধান অতিথি হিসেবে আজ সকাল ৯টায় আজিমপুর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্রে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ এর উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই টিকাটি তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। সরকার এই টিকা পেয়েছে টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক মঞ্চ গ্যাভির কাছ থেকে। এরই মধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আরও আটটি দেশে এ টিকা দেওয়া হয়েছে।এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না- জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, টিকাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। এটি নিরাপদ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্যাম্পেইনের সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সব ছাত্র-ছাত্রীকে এক ডোজ করে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। এই নিবন্ধন অব্যাহত আছে। যেসব শিশুর জন্মসনদ নেই বা জন্মনিবন্ধন হয়নি, তাদের জন্যও টিকার নিবন্ধন করা যাবে। এর জন্য নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা নিতে হবে। টিকা গ্রহণের জন্য অভিভাবকদের https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv" ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্ম-নিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের পর জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তীতে ইপিআই সেন্টারে এই টিকা দেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকাদান চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এর বাইরেও ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে এই টিকা দেওয়া হবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে। শহর এলাকার পথশিশুদের টিকা দেবে বিভিন্ন এনজিও।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, মূলত দুষিত পানি, খাবারের মাধ্যমে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার অভাবে টাইফয়েও ছড়িয়ে থাকে। এক গবেষণা অনুযায়ী ২০২১ সালে বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুরাই টাইফয়েড জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।