নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বড়বিলশলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া দুটি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। ১২ নম্বর ঘরটির মালিক ছিলেন কেশাববাড়িয়া গ্রামের মো. ওমর আলী। তাঁর কাছ থেকে মাস ছয়েক আগে ১৫ হাজার টাকায় ওই ঘর কেনেন বিলশলিয়া গ্রামের রাবিয়া বেগম। একই প্রকল্পের ১১ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ কেশাববাড়িয়ার শামীমের নামে। তিনি ওই ঘর ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন বিধবা ফজিলা খাতুনের কাছে। ফজিলা খাতুন জানান, তাঁর ঘরবাড়ি নেই। কোনোমতে ১২ হাজার টাকা জোগার করে শামীমের কাছ থেকে এই ঘরটি কিনে বসবাস করছেন।অথচ ঘরটি বরাদ্দ পাওয়া শামীমের নিজস্ব বাড়ি আছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি শামীম বা ওমর আলীর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উপজেলায় চার পর্বে ৬২৯ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব ঘরের মধ্যে ১৮৫টিতেই ঝুলছে তালা।
অভিযোগ রয়েছে, এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকারি ঘর পাওয়া বেশির ভাগ মানুষেরই নিজস্ব ঘর ও জমিজমা রয়েছে। যে কারণে তারা নিজের ঘর দখলে নিয়ে তালা ঝুলিয়ে গেছেন। এসব ঘরেতে রাত নামলেই চলে মাদকের আড্ডা। অসহায় যেসব নিবাসী আছেন, তারা ভয়ে মুখ খুলতেও পারেন না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ২১-২২ অর্থবছরে ১৫৫টি পরিবারসহ চারটি পর্যায়ে উপজেলায় মোট ৬২৯টি ক শ্রেণির ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করার মধ্য দিয়ে লালপুরকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। দুই শতাংশ জমির ওপরে নির্মিত প্রতিটি ঘরে খরচ হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার টাকা। উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বাহাদুরপুরে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে তিনটি ঘর বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকায়। এর মধ্যে চৌমহনি গ্রামের আলমাজ হোসেন তাঁর ঘরটি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন বাহাদুরপুর গ্রামের মেতু আলীর কাছে। সালামপুর গ্রামের আনোয়ারা বেগম ৫০ হাজার টাকায় ঘর বিক্রি করেন বাহাদুরপুরের আবুল হোসেনের কাছে। ছোট বিলশলিয়া গ্রামের ফজল হক ৫০ হাজার টাকায় ঘর হাবিবপুর গ্রামের জরিনা বেগমের কাছে।
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হয়নি। নিয়মবহির্ভূতভাবে বরাদ্দ দেওয়ায় অনেক ঘর এখন খালি রয়েছে। এসব ঘরে স্থানীয় মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রতি রাতেই আড্ডা বসান। প্রকৃত ভূমিহীনদের নামে এসব বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।বিলমাড়িয়া ও ওয়ালিয়া ইউনিয়নের দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫৭টি ঘরের মধ্যে ১৮৫টিতেই ঝুলছে তালা। ২১-২২ অর্থবছরে ওয়ালিয়া ইউনিয়নের নান্দ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৭টি ঘর বরাদ্দ হয়। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি এখন তালাবদ্ধ। বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মার চরে অবস্থিত রসুলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পটি উপজেলার সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ২০২২ সালের মে মাসে এখানে ২৪০টি ঘর গৃহহীন পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়। ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, এখন সেখানে মাত্র ৫০-৬০টি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বসবাস করেন। ১৮০টির মতো ঘর খালি।
রসুলপুর আশ্রয়ণের নিবাসী আরিফা বেগম পরিবার নিয়ে থাকেন তিন বছর ধরে। তিনি বলেন, ২৪০টি ঘরে মাত্র ৬০-৭০ জন বসবাস করে। আর কেউ থাকে না। অন্য জায়গায় এসব নিবাসীর বাড়ি থাকলেও তাদের নামেও বরাদ্দ হয়েছে। তারা শুধু উদ্বোধনের দিনে এসে ঘর বুঝে নেন। পরে তালা দিয়ে চলে যান। একই প্রকল্পের বসবাসকারী শাহেরা খাতুনের ভাষ্য, এসব খালি ঘরে রাত হলেই অপরিচিত লোকজন আসা-যাওয়া করে। অনেকে মাদক সেবন করে। তারা কিছুই বলতে পারেন না। লালপুরের ইউএনও মেহেদী হাসানের ভাষ্য, এই ঘরগুলো নির্মাণের সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারাই এ বিষয়ে বলতে পারবেন। সরকারি বরাদ্দের ঘর বিক্রির সুযোগ নেই। তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ৭৬ ঘরের খুঁটি ছাড়া কিছু নেই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের জন্য ৬ কোটি টাকা খরচে ১১০টি ঘরের গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৩১টি টিউবয়েল স্থাপন করা হয়। কিন্তু সরেজমিনে এসব ঘরের মধ্যে ৭৬টি ঘরের খুঁটি ছাড়া কিছুই দেখা মেলেনি। উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ওই গুচ্ছগ্রামে শনিবার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, কিছু ঘর খালি পড়ে আছে দীর্ঘদিন। অধিকাংশ ঘরেই প্রকৃত মালিকেরা থাকেন না। সন্ধ্যা নামলেই মাদকসেবীদের আনাগোনা দেখা যায়।ঘর দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করা হয়নি উল্লেখ করে গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এমএ মতিন মোল্লা বলেন, প্রকৃত ভূমিহীনদের না দিয়ে প্রভাবশালীদের ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। গোবিন্দগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তামশিদ ইরান খান শুনেছেন গুচ্ছগ্রামের ঘরে অনেকেই থাকেন না। তিনি বলেন, অনেক ঘরে তালা ঝোলানো। যেসব ঘরে তালা ঝুলছে, এগুলোর বরাদ্দ বাতিলে ব্যবস্থা নেবেন।