NEWSTV24
দেশে গণভোট কতবার এবং কেমন হয়েছিল
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

যে কোনো সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের জন্য ভোটারের সামনে থাকে প্রার্থী, প্রতীক কিংবা দলীয় পরিচিতি। কিন্তু গণভোটের ক্ষেত্রে এসব থাকে না। সেখানে ব্যালটে থাকা প্রশ্নের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটারকে হ্যাঁ কিংবা না মত দিতে হয়। প্রশ্নটি তৈরি করা হয় কতগুলো প্রস্তাবের ভিত্তিতে। যেগুলোর বিস্তারিত ভোটারকেই জেনে নিতে হয়।বাংলাদেশে এ পর্যন্ত গণভোট হয়েছে তিনবার। এর মধ্যে প্রথম দুটি ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও তাদের কর্মসূচির প্রতি আস্থা জ্ঞাপন সংক্রান্ত। তৃতীয়টি হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর নিয়ে।এবার চতুর্থ গণভোট আয়োজনের আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, এর বিষয় জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান ও আইনি সংস্কার অনুমোদন।গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুপারিশ-সংক্রান্ত দুটি খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। সেখানে গণভোট নিয়ে ব্যালটে কী প্রশ্ন থাকবে, তার উল্লেখ আছে। প্রশ্নটি হলো আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং ইহার তপশিল-১-এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?

প্রশ্ন উঠছে, তপশিল-১-এ কোন কোন প্রস্তাব আছে? অন্তর্বর্তী সরকার কোন ক্ষমতাবলে গণভোট আয়োজনের আদেশ দেবে? আগের গণভোটগুলো কী নিয়ে এবং সেগুলোতে জনমত কতটা প্রতিফলিত হয়েছিল?গণভোট কী বাংলাদেশে সবশেষ গণভোট হয় ১৯৯১ সালে। এরপর ৩৪ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে গণভোট একেবারেই অপরিচিত। জাতিসংঘের সংবিধান প্রণয়ন-সংক্রান্ত নথি এবং দেশের আগের ভোটগুলোর ধরন পর্যালোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, এ ধরনের ভোটে সংবিধান প্রণয়ন কিংবা সংশোধন, কোনো আইন তৈরি বা বাতিল, শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের মতামত চাওয়া হয়। গণমানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর উদ্দেশ্য থাকে বিধায় এই প্রক্রিয়া গণভোট নামে পরিচিত।জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে থাকা রেফারেন্ডাম ইন কনস্টিটিউশন মেকিং প্রসেস নামের নিবন্ধে বলা হয়েছে, সংবিধান গ্রহণ বা সংশোধনের জন্য আয়োজিত গণভোট, অর্থাৎ সংবিধানগত গণভোট হলো গণভোটের প্রধান ধরনগুলোর একটি। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে বিশ্বের ৫০ শতাংশেরও বেশি লিখিত সংবিধানে কোনো না কোনোভাবে গণভোটের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।আরেকটু সহজ করে বলা যাক। ধরুন, কল্পিত একটি দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। কিন্তু দাপ্তরিক কাজ ও যোগাযোগের জন্য একটি সাধারণ ভাষা দরকার। তখন সরকার এ নিয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করতে পারে। যে ভাষার পক্ষে বেশি ভোট পড়বে সেটি তখন সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

বাংলাদেশে এর আগে হওয়া গণভোটগুলোতে ভোটাররা ভোটদানের পদ্ধতি হিসেবে হ্যাঁ ও না এই দুটি শব্দকে বাছাই করেছেন। রাজনীতির তিন কাল নামে মিজানুর রহমান চৌধুরীর লেখা বইয়ে উল্লেখ আছে, হ্যাঁ-না ভোটের গোড়াপত্তনকারী ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান।জাতিসংঘ বলছে, ১৯৮৯ সালের পর রাজনৈতিক রূপান্তর ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী গণভোট ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সংবিধান সংশোধন বা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে গণভোট গ্রহণ বেড়ে যায়। বিশ্বের বহু সংবিধানে এ সংক্রান্ত বিধানও যুক্ত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে গণভোটের বিধান যুক্ত হয় দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পরে তা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের জুলাইয়ে হাইকোর্ট এক রায়ে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে থাকা গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করেছেন।