পুরনো পেঁয়াজের সরবরাহে টান এবং মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ দেরিতে ওঠায় বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর বাজারে গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।বাজারের বেশিরভাগ দোকানে পেঁয়াজ ১১০ টাকা বিক্রি হলেও পাড়া মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গত সপ্তাহে পণ্যটি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক লাফে দাম বেড়ে ১০০ টাকায় পৌঁছায়, যা গতকাল মঙ্গলবার আরও বেড়ে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।কদমতলী এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন বলেন, যদিও দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ তলানিতে, তারপরও দাম একলাফে এতটা বাড়ার কথা নয়। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ না উঠায় মজুদকারীরা দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পেঁয়াজের বিক্রি কমে গেছে।কথা হলে শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতারা বলেছেন, বছরের এমন সময় এমনিতেই পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়তি থাকে। এবার সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু বর্তমানে ভারতের পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি বাজারে না পাওয়ায় এখন প্রতিদিন দাম বাড়ছে।
পাইকারি বাজারে মানভেদে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে, চার দিন আগে শনিবার যা বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকা।শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা খোকন সাহা বলেন, বছরের এ সময় দেশি পেঁয়াজে টান পড়লে আমদানিকৃত পেঁয়াজ; মূলত ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। সেখানে বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ পড়েছে। অথচ পুরনো পেঁয়াজ ফুরিয়ে এসেছে। অন্যদিকে নতুন পেঁয়াজ আসতে এখনও মাসখানেক দেরি হবে। ফলে সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। দামেও এর প্রভাব পড়েছে। এদিকে রান্নার দরকারি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম একলাফে এতটা বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ভোক্তারা। কথা হলে গতকাল কদমতলী সাদ্দাম মার্কেটের একজন ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শেষে একটি পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু তাই বলে এক লাফে ৪০ টাকা বেড়ে যায় কীভাবে। এমনিতেই আগের ৮০ টাকা কেজি কিনে খেতে কষ্ট হচ্ছিল। এখন ১২০ টাকা কেজি দরে ক’জন মানুষ কিনে খেতে পারবে। আগে অল্প হলে বাজারে মনিটরিং দেখা যেত, বর্তমানে তা দেখা যায় না। এর সুযোগ নিয়েই দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হচ্ছে।
হিলিতে বেড়েছে ৩০ টাকা
আমাদের হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ও বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে দিনাজপুরের হিলি বন্দরের খুচরা বাজারে তিন-চার দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়ে প্রায় সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছে। মোকামে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ফলে খুচরা বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিন-চার দিন আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে।গতকাল সকালে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ৬০-৬৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে।হিলি বাজারের ক্রেতা মুকুল হোসেন ও বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, দুই-তিন আগেও ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছি। আজ এসে দেখি ৯০-৯৫ টাকা চাচ্ছে দোকানিরা। প্রতিদিনই নতুন দাম শুনতে হয়। এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে ২৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি।বাজারে আসা ক্রেতা বাদশা মিয়া ও চঞ্চল বর্মন বলেন, বাংলাদেশে কোনো কিছুর নিয়ম নেই। এখানে খেয়াল খুশিমতো জিনিসের দাম বাড়ে। আমরা গরিব মানুষ। বাজারে এলেই মাথা ঘুরে যায়। কয়েক দিন আগেও ৬০-৬৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছিলাম, আজ তা ৯০-৯৫ টাকা কেজি। আবার ছোট পেঁয়াজ কেউ কেউ ১০০ টাকা চাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচব?
হিলি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মঈনুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে মোকামে পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে। এখন আমরা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে কিনে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আজ শুনলাম মোকামে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা। তারপর খরচ আছে। আগামীকাল দেখা যাবে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। দাম বেশি থাকায় বিক্রিও কমে গেছে।হিলি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফেরদৌস রহমান বলেন, দেশের যেসব মোকামে পেঁয়াজ আসে, সেখানেই এখন সরবরাহ কম। ভারত থেকেও আমদানি অনেক কমে গেছে। এই ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। সরকার যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুতই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।বাজার কমিটির সদস্যরা বলছেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং অভ্যন্তরীণ মোকামগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।অন্য দিকে, হিলি বাজারে স্বল্প পরিমাণে দেশি পাতা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।