NEWSTV24
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, বড় বাধা ভারত
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২১ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

একসময় তিনি ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একজন বিপ্লবী নেতার কন্যা। ১৯৭০-এর দশকে বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডই তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের পথ করে দিয়েছিল। তবে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষে পৌঁছানোর পর ঘটে ক্ষমতা থেকে এক অবিশ্বাস্য পতন; যেতে হয় ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসনে।শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর তা কার্যকর হতে পারে, যদি নয়াদিল্লি তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভে সহিংস দমন-পীড়ন চালানোয় ক্ষমতাচ্যুত এই নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই বিক্ষোভে তাঁর সরকারের পতন হয়। ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা ১৫ বছরের শাসনের পর তিনি গত বছরের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম একটি দেশের রাজধানীতে আশ্রয় নেন।এখন তিনি দুই দেশের মধ্যে এক উত্তেজনাপূর্ণ অচলাবস্থার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। ঢাকা তাঁর অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে তাঁকে প্রত্যর্পণের দাবি জানাচ্ছে। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলছেন, তিনি এই অপরাধ করেননি।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, গণরোষ থেকে বাঁচতে তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। তিনি ভারতে লুকিয়ে আছেন আর তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হলো। এটি সত্যিই এক ব্যতিক্রমী গল্প।রাজনীতিতে শেখ হাসিনার যাত্রাপথ শেক্সপিয়রীয় আদলের এক গল্পের মতোমর্মান্তিক ঘটনা, নির্বাসন ও ক্ষমতার আখ্যান, যা তাঁর নিজ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।বাংলাদেশের ক্যারিশম্যাটিক জাতির পিতাশেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। সে হিসেবে তিনি পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধিকারের সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করার মধ্য দিয়ে জীবনের শুরুতেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের রক্তক্ষয়ী একটি রাতই সত্যিকার অর্থে তাঁকে এ পথে নিয়ে আসে।এক নৃশংস সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তারা ঢাকার বাসভবনে তাঁর বাবা, মা ও তিন ভাইকে হত্যা করেন। ওই সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন পশ্চিম জার্মানি সফরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।সেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। যিনি ছিলেন শেখ হাসিনার ভবিষ্যতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার স্বামী। জিয়াউর রহমানের সরকার একটি আইন পাস করে, যে আইনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের কয়েক দশক ধরে সুরক্ষা দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনার জীবন ওই এক রাতেই পাল্টে যায় এবং তিনি ছয় বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হন। এ সময়টি ভবিষ্যৎ এই নেত্রীর মনে ভারত রাষ্ট্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা গেঁথে দেয়।অবশেষে ১৯৮১ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তখন দেশটি তার প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য সোচ্চার ছিল। তবে তিনিও এমন এক রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন, যা নির্ধারিত হতে যাচ্ছিল বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্যে নিপতিত হওয়া আরেক নারী দ্বারা খালেদা জিয়া, যাঁর স্বামীও পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।বাধ্যতামূলক নির্বাসন থেকে ফিরে আসার দিনটির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন,যখন আমি বিমানবন্দরে নেমেছিলাম, তখন আমার কোনো আত্মীয়কে দেখিনি, কিন্তু লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। সেটাই ছিল আমার একমাত্র শক্তি।এভাবেই শুরু হয়েছিল বেগমদের লড়াইয়েরযুগদুই নারীর মধ্যে এক গভীর ব্যক্তিগত অথচ ধ্বংসাত্মক দ্বন্দ্ব, যার প্রভাব পরবর্তী ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশকে গ্রাস করেছিল।