NEWSTV24
বিশ্বমণ্ডলে আলোচনায় বাংলাদেশ
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:১৬ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের নতুন পরিচয় তখন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । যৌথ বাহিনীর আক্রমণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল একের পর এক হানাদারমুক্ত হতে থাকে। আসন্ন পরাজয় টের পেয়ে পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক মহলে দৌড়ঝাঁপ বাড়িয়ে দেয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলতে থাকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি।এই দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত যশোরের পতন হয়। মুক্ত হয় ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা এবং সিলেটও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাকিস্তানি সেনারা পালাতে শুরু করে। দুই শতাধিক সেনা ও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করে। এ দিন সিলেটের পতন হয় যশোরের কিছুক্ষণ পর। যৌথ বাহিনী প্রথমে সিলেটের শালুটিকর বিমানবন্দর (বর্তমানে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) দখল করে। সেখানে যৌথ বাহিনীর ছত্রীসেনা অবতরণ করে। এরপর চারদিক থেকে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাকিস্তান সেনারা পিছু হটে মেঘনা নদীর এপারে ভৈরব বাজারে অবস্থান নেয়। এ দিন আরও মুক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা, শেরপুর, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, নেত্রকোনার কেন্দুয়া ও কলমাকান্দা, বাগেরহাটের মোংলা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের দিরাই। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এদিন এক বেতার ভাষণে বলেন, ঢাকা মুক্ত হতে আর বেশি দেরি নেই। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্বের সব দেশের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য। মুজিবনগরের একজন সরকারি মুখপাত্র জানান, ভারতের স্বীকৃতির পর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে স্থির হয়েছে, ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তর মুজিবনগর থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে। বাংলাদেশ সরকার হবে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে এক জরুরি আলোচনা হয়। আর্জেন্টিনা দুই দেশকে অস্ত্র সংবরণ করে সীমান্তের দুদিকে তাদের সেনা সরিয়ে নিতে প্রস্তাব উত্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদেও অনুরূপ প্রস্তাব তোলা হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দিয়ে প্রস্তাবটি বাতিল করে দিলে সেটি সাধারণ পরিষদে পাঠানো হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত ভারতের প্রস্তাবে বলা হয়, বিষয়টি সাধারণ পরিষদের বিচার্য হতে পারে কি না, সেটা পরিষদের কার্য পরিচালনা কমিটিতে বিচার করে দেখা হোক।জাতিসংঘের অধিবেশনে সংঘাতের মানবিক দিক সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট একটি বিবৃতি পেশ করেন। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সেনা অপসারণের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটি মানার বাধ্যবাধকতা ছিল না। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১০৪টি, বিপক্ষে ১১টি। ভারতের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে চীন আরেকটি প্রস্তাব আনে। সোভিয়েত ইউনিয়নও একটি প্রস্তাব আনে। কোনোটিই ভোটে দেওয়া হয়নি।এর আগে ভারত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে এ মর্মে দাবি জানায়, বাংলাদেশকে অবশ্যই রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সেনা অপসারণ নিয়ে আনা প্রস্তাব সম্পর্কে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য না হলে তা বলবৎ করা যাবে না।