দেশের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিতে বিস্তর ফারাক। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও ডিগ্রি একই কিন্তু বৈষম্য প্রকট। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তনের নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি বলেছে, অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী কোনোভাবেই ভর্তি করা যাবে না। এতে করে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে পারবে বলে মনে করছে ইউজিসি। কিন্তু এতে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেখভালকারী ইউজিসি নির্দেশনা বাস্তবায়নে রয়েছে কঠোর অবস্থানে। বলছে, নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে না যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেসব প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রেডিটেশন পাবে না। অ্যাক্রেডিটেশন পেতে হলে তাদের পড়াতে হবে হালনাগাদ অনুমোদিত আউটকাম বেজড কারিকুলাম। শিক্ষাবিদরাও মনে করছেন, ইউজিসির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য সময় বাড়বে। পরীক্ষাকেন্দ্রিক সেমিস্টারনির্ভরতা কমে যাবে। এক কথায় তিন-চার সেমিস্টার থেকে দুই সেমিস্টার চালু হলে কোর্স সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদের গলদঘর্ম হওয়া বন্ধ হবে।
দুই সেমিস্টার হলে বছরে দুবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে বিষয়গুলো আত্মস্থ ও রপ্ত করার সময় বেশি পাবে। উন্নত দেশগুলোতে বছরে স্প্রিং ও ফল এ দুটি সেমিস্টার। আর আমাদের দেশে বছরে তিনটি- স্প্রিং, ফল ও উইন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতি চার মাসে একটি সেমিস্টার। তিনি বলেন, কোনো কোনো বিষয়ে ১৬০ থেকে ১৮০ ক্রেডিট পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। এত কম সময়ে আসলেই কি এত ক্রেডিট পড়ানো সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে যার মতো করে পড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনেকটা গলদঘর্ম করতে হয় লেখাপড়া। এ জন্যই আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড গাইড লাইন ফলো করতে দুই সেমিস্টার পড়াতে বলছি।বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে ডুয়েল সেমিস্টার ও তিন সেমিস্টার পদ্ধতিকে প্রাইম সেমিস্টার বলা হয়। মূলত বাণিজ্যিক কারণেই প্রাইম সেমিস্টার পদ্ধতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ দেশে চালু করেছে। তারা বলেন, কেবল বাজার ও বাণিজ্যমুখী বিষয়গুলোকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো চাকরির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ বা চাহিদাসম্পন্ন, সেগুলোই পড়ানো হয়। বাংলা, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি এমনকি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয়ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বহীন।
সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী জানুয়ারি থেকে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে কড়াকড়ি করছে ইউজিসি। আর এ অবস্থায় আসছে জানুয়ারি থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিনটির বদলে দুই সেমিস্টারে পাঠদানে ইউজিসির নির্দেশনায় আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছেও সমিতি নিজেদের আপত্তি তুলে ধরেছে। সম্প্রতি বনানীতে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত মানবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমিতির সভাপতি ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন অভিযোগ করেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা না করেই কমিশন নতুন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা তাদের আলোচনা করতে বলেছি। তা না হলে আগামী বছরও আগের মতোই যেখানে তিন সেমিস্টার আছে, যেখানে দুই সেমিস্টার-সেখানে সেভাবেই চলবে।