শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতিহিট অ্যালার্ট আরও তিন দিন বাড়তে পারেরাঙামাটিতে সড়ক ও নৌপথে অবরোধ চলছে কক্সবাজারের রেলপথ অনিরাপদএফডিসির ঘটনায় ডিপজল-মিশা সওদাগরের দুঃখ প্রকাশ
No icon

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবি

চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করছে ঢাকা ও নেপিদো। এ উদ্দেশ্যে গত শুক্রবার একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলকে রাখাইন ঘুরিয়ে আনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসনের সার্বিক পরিস্থিতি জাতিসংঘকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের দাবি ঢাকার কাছে জানিয়েছে জাতিসংঘ।গতকাল রোববার ঢাকার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-প্রধান জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করতে চাননি জোহানেস ভ্যান। তবে বৈঠক সূত্রে ইউএনএইচসিআরের অবস্থান জানা গেছে।বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশেদ আলম বলেন, ইউএনএইচসিআর-প্রধানকে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়েছে।  এ সময় রোহিঙ্গা অর্থায়নের সর্বশেষ হালনাগাদও বৈঠকে তুলে ধরা হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগে সেখানকার নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবি বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরে জাতিসংঘ। এর উত্তরে বাংলাদেশ জানায়, মিয়ানমার একটি সার্বভৌম দেশ। তারা কাকে কীভাবে নাগরিকত্ব দেবে সেই দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ দিতে পারে না। এ দায়িত্ব ইউএনএইচসিআরের ওপর চাপিয়ে দেয় ঢাকা।

  মিয়ানমারে ইউএনএইচসিআরসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে যে সংকট রয়েছে, তা জাতিসংঘকেই সমাধান করতে হবে। এ সময় জোহানেস ভ্যান জানান, রাখাইনে তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হয় না। ইউএনএইচসিআর যাতে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে মিয়ানমারকে অনুরোধ করতে ঢাকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ঢাকা তাঁর এ অনুরোধও নাকচ করে দিয়েছে। বলা হয়, ঢাকার মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা। আর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুরু থেকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। সেখানে কোনো সমস্যা থাকলে তা তুলে ধরতে বলা হয়েছে ইউএনএইচসিআরকে।রোহিঙ্গারা যদি ফেরত যেতে না চায়, তাহলে বাংলাদেশের করণীয় কী এর উত্তরে নাম না প্রকাশের শর্তে এক কূটনীতিক বলেন, তারা স্বেচ্ছায় না গেলে বাংলাদেশ ফেরত পাঠাবে না। গত দুইবারের মতো তৃতীয়বারও প্রত্যাবাসন চেষ্টা বিফল হবে; এর বেশি কিছু না।

তিনি বলেন, টেকসই প্রত্যাবাসনে নাগরিকত্ব একটি বড় বিষয়। এটি নিশ্চিত জাতিসংঘকেই করতে হবে। প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও বিষয়টি ছিল না।ইউএনএইচসিআরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে বাংলাদেশের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাবে না।বর্ষা মৌসুমের আগেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এ কারণে রাখাইনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এসেছে রোহিঙ্গা ও সরকারের ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক পরিবেশ দেখছে না রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ।রাখাইনে যাওয়া প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা সদস্য রশিদ উল্লাহ বলেছেন, আমরা নাগরিকত্বের দাবি করেছি, ভিটামাটি দাবি করেছি। সেগুলো ফেরত দিলে আমরা যাব। রাখাইনে অনেক জায়গা ঝোপ-জঙ্গলে ভরে গেছে। সেখানে মানুষজন নেই।এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগে যে স্থানে রোহিঙ্গারা ছিল, তা সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। সেখানে আর কিছু নেই। প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার আন্তরিকতা দেখাচ্ছে। তাদের একটি প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে আসবে রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনে। এর পরও যদি প্রত্যাবাসন শুরু না হয়, তাহলে এবারও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।