যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পেলো হামাসঝুম বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরলো সিলেটেজলবায়ু পরিবর্তনজনিত কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশতানজানিয়ায় ভারী বৃষ্টি-ভূমিধসে নিহত ১৫৫মাসের শুরুতে বৃষ্টির আভাস, গরম কমা নিয়ে সংশয়
No icon

ইভ্যালির ব্যবসার ষোলআনাই ফাঁকি

সুকুমার রায়ের একটি কবিতা আছে যেখানে শহুরে এক বাবু মশাই নৌকায় চেপে মাঝির জীবন কতটা মিছে অহংকারের সঙ্গে তা-ই বলছিলেন। ঝড় ওঠার পর যখন নৌকা ডুবুডুবু; সাঁতার না জানা বিপদগ্রস্ত বাবুকে দেখে মাঝির মন্তব্য ছিল- তোমার দেখি জীবনখানা ষোলআনাই মিছে! হাঁকডাক করে ই-কমার্স ব্যবসায় নামা ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্পদের যে তথ্য দিয়েছে তা পর্যালোচনা করে এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ষোলআনাই মিছে।গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো সম্পদ বিরণীতে মোট দায় ও মূলধন দেখানো হয়েছে ৫৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূলধন মাত্র ১ কোটি টাকা; বাকি ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকাই দায়। যা গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইভ্যালির কাছে পাওনা। ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির হিসাব এটি।সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছেন, ইভ্যালি তাদের যে সম্পদ দেখিয়েছে তার প্রায় পুরোটাই অদৃশ্য বা কাল্পনিক অর্থাৎ অস্থাবর সম্পদ। কাগজে কলমে দেখালেও বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই। যে পরিমাণ স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে তার প্রায় ৩৬ গুণ বেশি অর্থ প্রতিষ্ঠানটির দায় হিসেবে রয়েছে। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার মূলধন দিয়ে কোম্পানি তৈরি করে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করছে ইভ্যালি।

সম্পদের তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ইভ্যালির কাছে তিন সপ্তাহে তিন ধরনের তথ্য চেয়েছি। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি আজ (গতকাল) সম্পদ ও দায়ের হিসাব দিয়েছে। বাকি তথ্যগুলো পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট স্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১০৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে সম্পদ, কারখানা এবং উপকরণের মূল্য ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর কারেন্ট অ্যাসেট বা চলতি সম্পদ দেখানো হয়েছে আরও প্রায় ৯০ কোটি টাকা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও ব্যাংকার ডি আর মোহন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইভ্যালি যে হিসাব দিয়েছে এর পুরোটাই ফাঁকি। প্রতিষ্ঠানটির ৫০০ কোটি টাকার ওপরে দায় রয়েছে, যেখানে ১ কোটি টাকার মূলধন দেখানো হয়েছে। এ মূলধন কোথায় কীভাবে রয়েছে হিসাবে সে তথ্যও নেই।

ডি আর মোহন বলেন, ;ইভ্যালির কারখানা, উপকরণ আর প্রপার্টির যে হিসাব দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি টাকার, তা-ই তার সম্পদ। এর বাইরে যে চলতি সম্পদ দেখানো হয়েছে তা তার নিজের নয়। গ্রাহকের থেকে পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ নেওয়া অর্থ। ফলে ইভ্যালি তার সম্পদ বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করতে চাইলে মোট দায়ের সর্বোচ্চ ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারবে।বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, দেশে এখন এমন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে যারা কাগজে-কলমে সম্পদ দেখিয়ে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে নিবন্ধন নিলেও বাস্তবে এগুলোর কোনো সম্পদ নেই। এদের প্রতারণার আরেকটা বড় প্রমাণ হচ্ছে এরা গুডউইল বা ইনটেনজিবল অ্যাসেটকে বড় করে দেখায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালি সম্পদের যে তথ্য দেখিয়েছে সেখানেও ইনটেনজিবল বা অদৃশ্য সম্পদের বড় হিসাব দেখানো হয়েছে। তাদের মোট ৪৩৮ কোটি টাকার অদৃশ্য সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসেবে দেখানো হয়েছে ৪২২ কোটি টাকা।