যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের লিচুগাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ১২১ ফিলিস্তিনি১১ বছর পর আবারও এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশ দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস৩ দিন ভারত ভ্রমণে যেতে পারবেন না বাংলাদেশিরা
No icon

তৃতীয় কিস্তিতে বাড়তি ঋণ দেবে আইএমএফ

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চাপে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত তৃতীয় কিস্তির বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আরও বড় বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। শর্ত বাস্তবায়নের পরিস্থিতি দেখতে ঢাকায় আসা মিশনের বিবৃতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা আসে আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রো ইকোনমিকস ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। মিশন শেষ করে গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তৃতীয় কিস্তির পরিমাণ হবে ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ২২ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে তারা একমত হয়েছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতার নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী জুনে এ অর্থ ছাড় হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে আইএমএফ। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থছাড় করার কথা। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। সে হিসাবে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার হওয়ার কথা ছিল।বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ার কারণেই আইএমএফ ঋণ কর্মসূচিতে ঢুকেছে বাংলাদেশ। সে চাপ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফ মিশনকে বলা হয়, ঋণ কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে বেশকিছু শর্তের বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী দিনের জন্য বেশকিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে সাময়িক চাপ কমাতে নির্ধারিত তৃতীয় কিস্তির চেয়ে বেশি অর্থ প্রয়োজন। এ চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারাও কিস্তির অর্থ বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। গত ডিসেম্বর নাগাদ শর্ত পরিপালনের ভিত্তিতে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সময়ে নির্ধারিত পরিমাণগত ও কাঠামোগত ১০টি শর্তের মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া ৯টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। শর্ত পূরণে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি অর্থবছর চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তিন বছরের মধ্যে এ খাতে ভর্তুকি শূন্যতে নামিয়ে আনার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ইতোমধ্যে ভর্তুকি তুলে দিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পর্যায়ক্রমিক সূত্রভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আইএমএফও বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, মুদ্রানীতি অধিকতর সংকোচন এবং বিনিময় হারে আরও বেশি নমনীয়তা। এসব সংস্কার আনায় বাংলাদেশকে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হতে সহায়তার পাশাপাশি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত হবে আগামী বাজেটকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা।সংস্থাটি মনে করে, বর্তমান আমদানি নিয়ন্ত্রণের নীতি এবং মুদ্রানীতির সংকোচনের প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে আগামী অর্থবছর আমদানি বৃদ্ধি এবং ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলতি অর্থবছরে বজায় থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে পরের অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ২ শতাংশে নামবে। সংকোচনমূলক নীতির প্রভাবে এবং বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কম থাকার প্রত্যাশায় আইএমএফ এ প্রাক্কলন করছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে বলেও মনে করে সংস্থাটি।