শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করুন: ডা. শফিকুর রহমানবাংলাদেশে দিল্লির মসনদ জ্বালিয়ে দেওয়া হবে: হাসনাত আব্দুল্লাহভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না পলাতক ব্যক্তিরা২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, বিশেষ নিরাপত্তা দেবে সরকারকেরানীগঞ্জে বহুতল ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ ইউনিট
No icon

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

দেশে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৬০ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৫৮৭ জন। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। রাজধানীবাসীর অভিযোগ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তাদের ভূমিকা দৃশ্যমান তো নয়ই, প্রশ্নবিদ্ধও বটে।এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়াধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তার জেরে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বলেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সঠিক পরিসংখ্যান না দেওয়ায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর বাইরে থেকে আসা যেসব রোগী ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, ওই সব রোগীও ঢাকার বলে পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মশার ভরা মৌসুম জুন-জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের স থগতি এবার ভোগাচ্ছে বেশি। এ মুহূর্তে যেসব এডিস মশা দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই ডেঙ্গু ভাইরাসবাসী। এটি আতঙ্কের বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শীতের তীব্রতা না বাড়া পর্যন্ত দেশবাসীকে ডেঙ্গুর সাথে লড়াই করতে হবে বলেও মনে করেন তারা। তাই চলতি নভেম্বর মাসেও স্বস্তি মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।মশক নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকায় থাকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একসময় ডেঙ্গুকে অভিজাত এলাকার রোগ বলা হতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর চরম ব্যর্থতা ও জনগণের অসচেতনতার কারণে এটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুরু থেকে কঠোর না হয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পর কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বেড়ে যায়। ফলে এসব তৎপরতা ফলপ্রসূ হয় না। প্রতি বছরই ঢাকঢোল পিটিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত অনেক মানুষের জীবনের বিনিময়ে হুঁশ ফেরে কর্তৃপক্ষের।

ডিএসসিসির তথ্যানুযায়ী, আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগ ঢাকার বাইরের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৭২ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে দেখানো হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮৪ জন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণের নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, তাদের আওতাধীন এলাকা থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪০ জন। দেশে ডেঙ্গুতে প্রাণহানির এ সংখ্যা ২০০০ সালের পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রাণ যায় ২৮১ জনের। আর ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের প্রাণ কেড়েছে ডেঙ্গু।এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবীর   বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতির সামনে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য উপস্থাপন করছে। ঢাকা দক্ষিণে ডেঙ্গু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। তবে এবার মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি হওয়াতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হয়েছে। আশা করছি, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, আমাদের জনবল, যন্ত্রপাতি ও কীটনাশকের কোনো অভাব নেই। সিটি করপোরেশন আগে যেভাবে কাজ করত, এখনও সেভাবে কাজ করছে। গত ৫ আগস্টের পর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কোনো রকম বাধাগ্রস্ত হয়নি।

সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ২০২১ সালের আগস্টে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করে, যেখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে প্রতি মাসে এডিস মশার ঘনত্ব ও ঝুঁকির তথ্য এবং চাহিদাপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালনের কথা জনপ্রতিনিধিদের। কিন্তু তিন মাসে কোনো তথ্যই মন্ত্রণালয়ে আসেনি। জনপ্রতিনিধি না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী  বলেন, সঠিক পরিসংখ্যানের অভাবে জাতীয়ভাবে কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যান হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে পরিসংখ্যান দেখায়, তার এক-তৃতীংশ ডিএনসিসির রোগী থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য দেয়। কিন্তু আমরা প্রতিটি রোগীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছি, সেখানে উত্তরের রোগী দক্ষিণে আবার দক্ষিণের রোগী উত্তরে দেখানো হয়। আবার ঢাকার বাইরে থেকে এসে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদেরও ঢাকার রোগী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এতে করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে জানান, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতটা খারাপ হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, ভরা মৌসুমে (জুন-জুলাই) ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের গতি অত্যন্ত সথ ছিল। ফলে এডিস মশাগুলো পরিপূর্ণ ভাইরাস বহন করে এখন সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। তাই নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও প্রশ্নের মুখে।