
সকালের টানা তিন ঘণ্টার তুমুল বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে গতকাল বিকেলেও কোথাও কোমর, আবার কোথাও হাঁটুপানি দেখা যায়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে সড়কেই বিকল হয়ে যায় অনেক যানবাহন। দেখা দেয় নগরজুড়ে যানজট।এতে বেশ দুর্ভোগে পড়েন ঘর থেকে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ। শিক্ষার্থীকে স্কুল-কলেজে যেতে বেগ পেতে হয়। বজ্রবৃষ্টির তীব্রতায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে সকালে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে বংশালের নাজিরাবাজার এলাকায় আমিন (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানীতে গত রোববার রাত ১২টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। তবে সকাল ৯টার পর দিনভর বৃষ্টি ছিল না।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হওয়া এ বৃষ্টিকে অতিভারী বৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করেছেন আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান। তিনি জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কাল বুধবার থেকে আরেকটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে।এদিকে, আন্তঃসংস্থার ঠেলাঠেলি আর করপোরেশনের অবহেলার কারণে জলজটের এই ভোগান্তি থেকে সহসা রাজধানীবাসী নিস্তার পাচ্ছেন না। জলাবদ্ধতা নিরসনের দুটি প্রকল্প এখনও কাগজে-কলমে ঘুরপাক খাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জটিলতার কারণে একটি প্রকল্প ঝুলে আছে, অন্য প্রকল্পটির কাগজপত্র প্রস্তুতির কাজ এখনও চলছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দুই সিটি করপোরেশন অন্তত পাঁচটি প্রকল্প হাতে নিলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা যায়নি। অনেক সড়ক পানির নিচে টানা বৃষ্টিতে মিরপুর-১০ থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত সড়কটি ডুবে যায়। মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশনের আশপাশেও জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের এস্কেলেটর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
গতকালের বৃষ্টিতে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, বংশাল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, গ্রিন রোড, পান্থপথ, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, হাতিরঝিল, রাজারবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, রামপুরা, মিরপুর, মিরপুরের কালশী রোড, ১ নম্বর থেকে টেকনিক্যাল যাওয়ার সড়ক, বিমানবন্দর এলাকার বলাকার সামনের সড়ক, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও, দক্ষিণ বনশ্রীসহ নগরীর অনেক অলিগলি দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডুবে ছিল। শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকার কিছু সড়কেও পানি জমে ছিল। নিউমার্কেট, জিগাতলা ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে পানি ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, করপোরেশন ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় বৃষ্টি হলে এই এলাকা ডুবে যায়। জলাবদ্ধতা থেকে যেন নিস্তার নেই বৃষ্টি হলেই রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে জিগাতলা কোমরপানিতে ডুবে থাকে। চার-পাঁচ ঘণ্টায়ও এই এলাকার পানি নামে না। সিটি করপোরেশেন সূত্রে জানা যায়, আগে বৃষ্টির পরে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এলাকার পানি গড়িয়ে বুড়িগঙ্গায় যেত। এরশাদ সরকারের আমলে আজিমপুর ও নিউমার্কেট এলাকার পানি বুড়িগঙ্গায় নিষ্কাশনে তিনটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা কলেজের সামনে নায়েম রোড হয়ে নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে এবং আজিমপুরের আইয়ুব কলোনি থেকে তিনটি ড্রেন বিজিবি সদরদপ্তরের ভেতর দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়েছে।২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর নায়েম রোড ও আইয়ুব কলোনির ৩০ ইঞ্চির বড় দুটি ড্রেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ৩ নম্বর রোডের গেটের ভেতর দিয়ে একটি ড্রেনে পানি নিষ্কাশন হলেও নিউমার্কেটের প্লাস্টিক, কাপড়সহ নানা আবর্জনায় ড্রেনটির ওই স্থান ভরাট হয়ে থাকে। ড্রেনের এই অংশে ম্যানহোলগুলো দূরে থাকায় পরিষ্কার করতেও বেগ পেতে হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।