দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে, কিছু স্থানে বৃষ্টির আভাসযুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলবিএনপির আরও চার নেতাকে বহিষ্কারবিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি ঘোষণা রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ল রিলাক্স পরিবহনের বাস, নিহত ৫ আহত ১৫
No icon

জানুয়ারিতেই নির্বাচন করবে ইসি

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনীতি দেশের বাইরেও গড়িয়েছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সহযোগিতার কথা বলে এরই মধ্যে ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোট ঘোষণা দিয়েছে, তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন করাটা ইসির জন্য ডিসক্রেডিট হবে। তবে ইসি জানিয়েছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকার কারণে তারা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই ভোট করবে। তারা সে প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে যেভাবেই হোক না কেন নির্বাচন হতে হবে; নইলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। সেই শূন্যতা তৈরি হলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। সেটি তো নির্বাচন কমিশন হতে দিতে পারে না।রাজনৈতিক দলগুলো কি ভোটের পথে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই ইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংকট আছে। কিন্তু আমাদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কেউ নেই, যারা নির্বাচন চায় না। আমরা কেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব না।নির্বাচনে পরিবেশ প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর বলেন, পরিবেশ নিয়ে হয়তো অনেকে কথা বলছেন। পরিবেশ যেন সুন্দর করা যায়, তা চেষ্টা করব। পরিবেশের সবটা সুন্দর করার দায়িত্ব তো আমাদের নয়।সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়েছি। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা তালিকা ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এরপরও যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, যেখানে বহু দল এবং প্রধান বড় রাজনৈতিক শক্তি, যাদের সরকার গঠনের ক্ষমতা আছে, তারা অংশগ্রহণ না করে, তাহলে সে নির্বাচন স্বীকৃতি পাবে না। বরং অন্য রকমের কোনো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন অসহায়; তাদের কিছু করার নেই। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে; কমিশন সংবিধানের বাইরে যেতে পারবে না। কমিশনের একমাত্র উপায় হচ্ছে, একতরফা নির্বাচন করব না, এমনটি বলা। তবে নির্বাচনের জন্য কমিশন নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যে কমিশনই নির্বাচন করবে, সেটা তাদের জন্য ক্রেডিটের না, বরং ডিসক্রেডিট হবে।এদিকে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হবে, জানুয়ারিতে ভোট। জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।এদিকে বাজেট স্বল্পতার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে সম্প্রতি সিইসিকে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইইউর চিঠির জবাব দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছোট পরিসরে হলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিইসি।এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইসি মো. আলমগীর বলেন, ইইউ যে আসবে না, তা তো তারা বলেনি। এখনো তিন মাস বা সাড়ে তিন মাসের মতো সময় আছে নির্বাচনের। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আসবে না, সেটি তো তারা বলেনি। যুক্তরাষ্ট্র এলে অবশ্যই আমরা খুশি; আমরা তো কাউকে নিষেধ করিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোডম্যাপ ঘোষণা করে ইসি। সে অনুযায়ী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী বিধিতে সংস্কারের কাজ শেষ করেছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজও শেষ। নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ তৈরির কাজ চলছে। সংসদ নির্বাচনের ভোটার হওয়ার জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছিল ইসি। আগামী ২ নভেম্বর চূড়ান্ত করা হবে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সারাদেশে ৪২ হাজার ১০৩টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া দেশীয় ৬৬টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় দফায় আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন করে ১৫০ সংস্থা আবেদন করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে আগামী মাসে চূড়ান্ত করা হবে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এখন চলছে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ।

আগামী মাস থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পরামর্শ নিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাশা ও বাস্তবতা শীর্ষক বৈঠক করে ইসি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সমন্বিত একটি অ্যাপ তৈরি করছে ইসি। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ নামের এই সিস্টেমটিতে থাকছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা। এ ছাড়া থাকবে ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের নাম ও এলাকার নাম। প্রতি ঘণ্টায় কত ভোট কাস্ট হয়েছে, তা জানা যাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে।এবার ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালটে। এ জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনী সব উপকরণ কেনা সম্পন্ন করতে চায় ইসি।ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো আছে। আমরা নির্বাচনী উপকরণ হাতে পাওয়া শুরু করেছি। আশা করছি নভেম্বরের মধ্যে সব উপকরণ পৌঁছে যাবে।বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ১ নভেম্বর।