
ময়মনসিংহ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার পূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরের দত্তপাড়া গ্রামে শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষের ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদ। ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালতের পাশে অবস্থিত মসজিদটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কথিত আছে, মসজিদটি নির্মাণ করেন তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার মাসুদ মিয়া। স্থানীয় এক প্রবীণ তথ্যটি দিয়ে বলেন, ওই সময়ে এটিই ছিল ঈশ্বরগঞ্জের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদের প্রবেশ গেটে নির্মাণকাল লেখা রয়েছে ১৮৮৭ সাল। ওই হিসাব অনুযায়ী মসজিদটির বর্তমান বয়স ১৩৫ বছর। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসীর মতে, মসজিদটি নির্মাণ হয় দুইশ বছর আগে। প্রাচীন আমলে সব স্থাপত্য নকশায় স্থাপত্য সময় লিখে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় হয়তো সঠিক তারিখ ও প্রতিষ্ঠাকাল লিখে রাখা হয়নি।
চীন ও দিল্লি থেকে কারিগর এনে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মসজিদের রয়েছে দুটি অংশ। ছাদের প্রথম অংশে রয়েছে বড় আকারের তিনটি বড় গম্বুজ এবং দ্বিতীয় অংশে রয়েছে তার চেয়ে ছোট আকারের পাঁচটি গম্বুজ। মসজিদের ছাদের আটটি গম্বুজই দূর থেকে দেখা যায়। আটটি গম্বুজের চতুর্পাশ ঘিরে রয়েছে ১৪টি মিনার। মিনারগুলোর ওপরের অংশও গম্বুজাকৃতির। মিনারগুলোর শীর্ষ চূড়ায় রয়েছে চাঁদ আকৃতির বাঁকানো খণ্ড। সাদার সঙ্গে মেরুন রঙের মিনারগুলো দেখে মনে প্রশান্তি আসে।
মসজিদটিতে রয়েছে আলাদা আজান ঘর। সেখান থেকেই মুয়াজ্জিনের আজান ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। উত্তর দেয়ালে রয়েছে ছোট আকৃতির খোপ খোপ ঘর। পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে ছয়টি পিলার। মসজিদে সব মিলিয়ে ১৯টি কাতার এবং প্রায় ৬০০ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের অপর বৈশিষ্ট্য বাইরে কোনো মেহরাব নেই, মেহরাব রয়েছে ভেতরে। মসজিদের সামনের একটি ঈদগাহ মাঠ এবং দক্ষিণাংশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরে পাড় ঘেঁষে বয়ে গেছে কাঁচা মাটিয়া নদ।
ঈদগাহ মাঠ, পুকুরসহ আনুমানিক ১৫ থেকে ১৬ কাঠা জমির ওপর মসজিদটি নির্মিত। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাস আর নানা ঘটনার সাক্ষী।