
আমরা রোজা রাখি একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য। রোজার পুরস্কার আল্লাহ নিজে দেবেন। তবে পার্থিব চাওয়া-পাওয়ার জন্য রোজা না রাখলেও ইসলামের প্রতিটি বিধান মানুষের ইহকালীন কল্যাণও বয়ে আনে। রোজার রয়েছে স্বাস্থ্যগত বহুমুখী উপকারিতা। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সর্বক্ষণ আহার, সীমাতিরিক্ত ভোজন ও দূষিত খাদ্য খাওয়ায় শরীরে এক ধরনের বিষাক্ত উপকরণ এবং উপাদানের সৃষ্টি হয় ও জৈব বিষ জমা হয়। যার কারণে দেহের নির্বাহী ও কর্মসম্পাদন অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো বিষাক্ত উপকরণ এবং জৈব বিষ দমনে অক্ষম হয়। ফলে তখন জটিল ও কঠিন রোগের জন্ম হয়। দেহের মধ্যকার এমন বিষাক্ত ও দূষিত উপাদানগুলো অতিদ্রুত নির্মূলকরণের নিমিত্তে পাকস্থলীকে মাঝেমধ্যে খালি করা একান্ত প্রয়োজন। রোজাই এর একমাত্র সহায়ক, যার বিকল্প করা যায় না।
মানব শরীরের ওপর রোজার প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, রোজা দ্বারা শরীরের ওজন সামান্য হ্রাস পায় বটে, তবে তা শরীরের কোনো ক্ষতি করে না, বরং শরীরের মেদ কমাতে রোজা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষা অধিক কার্যকর। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার আলোকে আরো জানা যায়, যারা মনে করেন রোজা রাখলে শূল বেদনার প্রলোপ বৃদ্ধি পায়, তাদের এ ধারণা সঠিক নয়, বরং ভোজনে তা বৃদ্ধি পায়।
পাকিস্তানের প্রবীণ প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নিবন্ধ থেকে জানা যায়, যারা নিয়মিত সিয়াম পালন করেন, সাধারণত তারা বাতরোগে, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত কম হন। এ ছাড়া ডা. ক্লাইভসহ অন্যান্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, ইসলামের সিয়াম সাধনার বিধান স্বাস্থ্যসম্মত ও ফলপ্রসূ। আর তাই মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার রোগব্যাধি তুলনামূলক অন্য এলাকার চেয়ে কম দেখা যায়।
প্রিয়নবী (সা.) কম খাওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ক্ষুধা লাগলে খেতে বলেছেন এবং ক্ষুধা না লাগলে খাওয়া বন্ধ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানসম্মত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে দীর্ঘজীবন লাভ করার জন্য খুব বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
জার্মানির ডাক্তার ফেডারিক হানেমান (জন্ম : ১৭৫৫, মৃত্যু : ১৮৮৪) বলেছেন, ‘রোজার মাধ্যমে মৃগীরোগ, গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের চিকিৎসা করা যায়।’ ইতালির বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী মাইকেল অ্যাংলো ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। ৯০ বছর বয়স পার হওয়া সত্ত্বেও তিনি কর্মক্ষম ও কর্মঠ ছিলেন। তাকে এর রহস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি বহুদিন আগ থেকেই মাঝে মাঝে রোজা রেখে আসছি। আমি প্রত্যেক বছর এক মাস, প্রত্যেক মাসে এক সপ্তাহ রোজা রাখি এবং দিনে তিনবেলার পরিবর্তে দুবেলা খাবার খাই।’
ক্যামব্রিজের ডাক্তার লেখার জিম। তিনি ছিলেন, ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ। সবকিছু গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে তার স্বভাব। তিনি রোজাদার ব্যক্তির খালি পেটের খাদ্যনালির লালা স্টোমক সিক্রেশন সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করেন। এতে তিনি বুঝতে পারলেন, রোজার মাধ্যমে ফুডপাটি কোলস সেপটিক সম্পূর্ণ আরো দেহের সুস্থতার বাহন। বিশেষত্ব পাকস্থলীর রোগের আরোগ্য গ্যারান্টি। মহাত্মা গান্ধীর উপোস থাকার ঘটনা সর্বজনবিদিত। ফিরোজ রাজ লিখিত দাস্তানে গান্ধীতে লেখা রয়েছে। তিনি রোজা রাখা পছন্দ করতেন। তিনি বলতেন, মানুষ খাবার খেয়ে নিজের দেহকে ভারী করে ফেলে। এ রকম ভারী অলস দেহ দুনিয়ার কোনো কাজে আসে না। তাই তোমরা যদি তোমাদের দেহ কর্মঠ এবং সবল রাখতে চাও, তবে দেহকে কম খাবার দাও। তোমরা উপোস থাকো। সারা দিন জপ-তপ করো আর সন্ধ্যায় বকরির দুধ দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করো। (দাস্তানে গান্ধী)
সিগমন্ডনারায়েড ছিলেন একজন মনস্তত্ত্ব বিশারদ। তার আবিষ্কৃত থিওরি মনস্তত্ত্বের ক্ষেত্রে পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে। তিনিও রোজা ও উপবাসের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। তিনি বলেন, রোজার মাধ্যমে মস্তিষ্কের এবং মনের যাবতীয় রোগ ভালো হয়। মানুষ শারীরিকভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির দেহ ক্রমাগত বায়ুচাপ সহ্য করার যোগ্যতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি খিঁচুনি এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে। এমনকি কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং এর রোগের সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকে।