ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ঢাকায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডবৃষ্টির পর আগামী সপ্তাহে আবার তাপপ্রবাহের শঙ্কানারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা আজদেশের ৮ বিভাগে হতে পারে টানা বৃষ্টি
No icon

জোর প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের

এগিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আগামী মাসের অর্থাৎ নভেম্বরের ৬ বা ৭ তারিখে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই হিসাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাকি আছে সাকুল্যে আর আড়াই মাস। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ব্যস্ত সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ের আন্দোলন নিয়ে। দাবি আদায়ের পর শুরু হবে নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান প্রস্তুতি। অন্যদিকে, সংবিধান অনুযায়ী এ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগে চলছে নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, জনমত বাড়াতে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা ইত্যাদি বিষয় অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ; এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে।গতকাল শনিবারও রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার ভোগ করবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিএনপি যেন কোনো অশুভ পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে না পারে, সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা গুজব ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকারকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চলছে।

এমন বাস্তবতা মাথায় রেখে তা মোকাবিলা করার পাশাপাশি দল এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলে বিশ^াস করে। এর কোনো বিকল্প হতে দেওয়া হবে না। নেতারা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে সরকার যে বিপুল পরিমাণ উন্নয়ন করেছে তা তুলে ধরে মানুষের মন জয় করে ফের ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে যে অপশাসন চালিয়েছে, সে সবও তুলে ধরা হবে জনগণের কাছে। সে লক্ষ্যেই নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে দল।এদিকে ইসি যথাসময়ে ভোটের আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্রমতে, ৬ বা ৭ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন চলছে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গতকাল শনিবারও প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের দৃঢ়প্রত্যাশা থাকবে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা রাষ্ট্রের, সরকারের কর্মচারী হিসেবে দলীয় চিন্তা-ভাবনার ঊর্ধ্বে থেকে পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন। কোনো অনিয়ম, সহিংসতা হবে না, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, এটাই প্রত্যাশা করছি। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হতে পারে। দলের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দলকে ডিজিটাইজড করার অংশ হিসেবে এবার অনলাইনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কথা ভাবা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে এ সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। দলীয় হাইকমান্ড মনে করছে, এতে করে নির্বাচনী আমেজ দৃশ্যমান হবে না। তাই ধানমন্ডি ৩/এ অথবা ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হবে।

দলের নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নাই। নির্বাচন কমিশনকেও দেখলাম নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে সক্রিয় থাকতে। আজও (গতকাল) তারা দৃশ্যমান কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে। এমন বাস্তবতায় কে নির্বাচনে এলো, না এলো তা বিবেচনার বিষয় নয়। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা রাজনীতি করছি। আমাদের বিশ^াস, নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ আছে এবং তারা নির্বাচনে আসবে। ইতোমধ্যেই দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটি দুটি বৈঠক করেছে। ইশতেহার প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিস্বরূপ আমাদের ইশতেহার প্রস্তুত হচ্ছে। ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশকে উপজীব্য করা হয়েছে। এতে গুরুত্ব পাবে যুবসমাজের কর্মসংস্থান, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বৈষম্য কমিয়ে আনা; সর্বোপরি দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে এগিয়ে যাওয়ার যাবতীয় বিষয়। এটা গেল নির্বাচনের প্রস্তুতির এক দিক; এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা মানুষের কাছে যাচ্ছে। তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরছে। ফলে তারা সহজেই বুঝতে পারছে কোন দল তাদের অনিবার্য।তিনি বলেন, সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ অতীতের মতোই নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ চায় এবং বিশ^াস করে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ হবে। আমরা চাই জনগণের প্রতি, দেশের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু নির্বাচনে না এসে যদি তারা মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের নিজেদেরই কপাল পুড়বে। কারণ জনরায় তাদের বিপরীতেই যাবে।

দলকে সংগঠিত করা এবং নির্বাচনমুখী করার অভিপ্রায়ে গত ৬ আগস্ট সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও বিভিন্ন মহানগর, জেলা, উপজেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও পৃথকভাবে কথা বলেছেন তিনি। বিভিন্ন বিভাগে ও জেলায় শান্তি সমাবেশ ও সুধী সমাবেশের মাধ্যমে দলে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি এবং নির্বাচনী উৎসবমুখর করার কাজ করছেন তিনি। একের পর এক উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে জনগণের কাছে ভোট চাইবার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর কাওলায় আওয়ামী লীগের জনসভা হয়েছে। এ মাসেই রাজধানীতে আরও তিনটি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল আওয়ামী যুবলীগ এবং ১৮ ও ২০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। ১৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষনেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।