ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ঢাকায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডবৃষ্টির পর আগামী সপ্তাহে আবার তাপপ্রবাহের শঙ্কানারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা আজদেশের ৮ বিভাগে হতে পারে টানা বৃষ্টি
No icon

সংলাপে শর্ত জুড়ে অটল দুই দল, তবু আশা

অর্থবহ সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের পাঁচ দফা সুপারিশ রাজনৈতিক অঙ্গনের নতুন রসদ। এই পটভূমিতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ সুপারিশকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি শর্ত বাদ দিতে রাজি হলে সংলাপে বসার বিষয়টি তারা চিন্তাভাবনা করতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পাঁচ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রেখে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন অসম্ভব।যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত আইআরআই ও এনডিআইর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল গত ৮ থেকে ১২ অক্টোবর ঢাকায় নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে ঢাকা সফর করে যাওয়া এ দলটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মার্কিন প্রশাসনের বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। দেশে ফিরে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি পাঁচ দফা সুপারিশ করলেও কখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং না করলে কী হবে, সে বিষয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি। এমনকি তারা আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা তা-ও ওই বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার করা হয়নি। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল।

দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অনেক আগে থেকেই সংকট নিরসনে সংলাপের ওপরে জোর দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি রাজধানীতে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ও সুজন আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা বর্তমান সংকট নিরসনে আবারও সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন।নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে গত তিন দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একাধিক সংলাপ হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। জাতিসংঘ দূতের মধ্যস্থতায় দু পক্ষের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়। এমনকি মধ্যস্থতা ছাড়াই সরাসরি দু দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব পর্যায়ে (আবদুল জলিল ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়া) সংলাপ হয়। তবে তাতেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এবারও সফল হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন তারা। তবে অতীতের এ বাস্তবতা মেনে নিয়েও সংলাপের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তাঁর মতে, এ পাঁচ দফা সুপারিশের মধ্যে দু পক্ষের জন্যই মুখ রক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশে একটি সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির পথ সুগম করবে এই পাঁচ দফা। এটা করতে হবে দ্রুতই। সময় হাতে বেশি নেই। তিনি বলেন, সুপারিশে নির্বাচন নিয়ে সংলাপ-সমঝোতা এবং নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অতীতে সমঝোতার উদাহরণ তুলে ধরে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, প্রকাশ্য সংলাপ সফল হয়নি, এটা ঠিক। তবে অপ্রকাশ্য সমঝোতার নজির এ দেশে আছে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের আগে দুই মার্কিন সিনেটরের মধ্যস্থতায় তিন দফা চুক্তি হয়। যার আওতায় ওই বছরের ৩০ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন। পরে সপ্তম সংসদ নির্বাচন হয়। ওই তিন দফা চুক্তির মধ্যে ছিল প্রথমত, ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত; দ্বিতীয়ত, ওই সময়ে কারাগারে থাকা জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদের মুক্তি নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি নিশ্চিত করা। গতকাল রোববার মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের একাধিক মন্ত্রী এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তবে নির্বাচন কমিশন সংলাপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়ে কমিশনের অবস্থান তুলে ধরেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে মো. আলমগীর বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার জন্য যে প্রচেষ্টা, তা ইসি শুরু করেছে।