বজ্রসহ শিলা বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে আজ শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করা হবে আজবৃহস্পতিবার থেকে কমতে পারে তাপমাত্রা, শুরু হবে বৃষ্টিঅনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
No icon

বিএনপি নেতাকর্মী ঢাকামুখী

বিএনপির মহাসমাবেশ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে চলছে সরকারি দলের হুমকি-ধমকি; পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসানোর ঘোষণা। প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রেপ্তার আর মামলার সংখ্যা। তবে এসব প্রতিবন্ধকতাকে এবার আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। সর্বাত্মক প্রস্তুতিতে থেমে নেই তারা। এবার ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোতে চায় বিরোধী দল বিএনপি। মহাসমাবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সারাদেশে বাড়ানো হয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। নেতাকর্মীও বাধা ডিঙিয়ে ঢাকামুখী হতে শুরু করেছেন। যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করতে মরিয়া তারা। নেওয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি। কেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। চলছে জনতার ঢল নামানোর পরিকল্পনা। তবে পথে পথে প্রতিবন্ধকতা ও হামলা করলে সেখানেই প্রতিরোধের চিন্তা করছে দলটি। এ পরিস্থিতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বলেছেন, সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীর ঢল নামাতে চান তারা। ফলে নেতাকর্মী যেন সমাবেশে না আসতে পারেন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হতে পারে। এমনকি পথে পথে বিএনপি নেতাকর্মীকে পুলিশি হয়রানি বা তাদের ওপর হামলার আশঙ্কাও করছেন তারা। তাই সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলার বিএনপি নেতাকর্মী নানা কৌশলে সড়ক, রেল ও নৌপথে আগেভাগেই ঢাকায় ঢুকছেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকায় আসছেন তারা।বগুড়ার গাবতলী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, গাবতলী উপজেলা থেকে শনিবার রাতে শতাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় গেছেন। এখনও যাচ্ছেন। এ জেলা থেকে ঢাকায় মহাসমাবেশে কমপক্ষে ৩০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন বলে দাবি করছেন নেতারা।

খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী জানান, তারা এরই মধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছেন। জেলার ৯টি উপজেলা থেকে প্রায় চার হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। তবে কোনো বাস ভাড়া করে নেতাকর্মী একসঙ্গে ঢাকায় যাবেন না। নেতাকর্মী যে যার মতো সমাবেশের আগে ঢাকায় পৌঁছে যাবেন। সমাবেশের আগের দিন বাস বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।ঢাকায় আসা কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শুধু ঢাকা মহানগরেই নয়, সারাদেশে অভিযান চলছে। তাদের বেশির ভাগই বাড়িছাড়া। মামলা না থাকলেও পুরোনো মামলায় অজ্ঞাত আসামির তালিকায়ও গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। ঘরে থাকলেও বিপদ আর রাজপথে থাকলেও বিপদ। তাই বিপদ মাথায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা। সামনের কয়েক দিনে আরও বাধা-বিপত্তি আসতে পারে।দলের নেতারা জানান, এবারের মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। প্রতিবার ঢাকায় কর্মসূচিতে আসার সময় যানবাহন বন্ধ থাকা, পথে পথে তল্লাশিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। সে কারণে এবার তারা মহাসমাবেশের আগেই ঢাকায় চলে আসেন। হোটেলে থাকলে সেখানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে। সে কারণে বন্ধু-বান্ধব অথবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে ১৮ অক্টোবর জনসমাবেশ থেকে এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামআলমগীর। এই কর্মসূচি থেকে মহাযাত্রা শুরুর কথা বলেছিলেন তিনি। তাঁর ওই ঘোষণার পর থেকেই সেদিন কী ঘটতে যাচ্ছে, কী ঘটবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই দিন শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে ৩০ অক্টোবর ঢাকায় সচিবালয়মুখী গণমিছিল অথবা পদযাত্রার কর্মসূচি আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, এ কর্মসূচিকে ভিন্ন নামে ডাকলেও এটি মূলত ঘেরাও কর্মসূচি। ধাপে ধাপে এক দফার এ আন্দোলনকে পরে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়মুখী পদযাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এতেও দাবি আদায় না হলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। পরের ধাপে অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকবে বলে জানা গেছে।দলটির অভিযোগ, বিএনপির এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কর্মসূচি ঘোষণার পর সেটা আরও বেশি মাত্রা লাভ করেছে। গত ১৭ অক্টোবর থেকে সারাদেশে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা করা হয়েছে। যাতে ১৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর মধ্যে নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা, ইকবাল হোসেন বাবলু, মুন্সীগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনসহ আরও অনেকে রয়েছেন।

ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা জানান, কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে তারা কৌশলে চলাফেরা করছেন। বাসাবাড়িতে যাচ্ছেন না। একেক দিন একেক জায়গায় ভবঘুরের মতো থাকছেন। একাধিক নেতাকর্মী এক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন না। এর মধ্য দিয়েও মহাসমাবেশ সফল করতে দিনরাত কাজ করছেন তারা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ওই দিন স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণজমায়েত করতে কাজ করছেন বলেও জানান তারা। জানা গেছে, বিএনপির ঘোষিত মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে ক্ষমতাসীন দল কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে, আবার অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও সেসব কাটিয়ে উঠতে কী কৌশল নিতে পারে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। যদিও দলের কেউ কেউ মনে করছেন, বৈশ্বিক চাপে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। আগের মতো এবারের মহাসমাবেশে সরকার বাধা দেবে না।