 
                                                                জাতীয় কাউন্সিল ছাড়াই বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দলের ৪৫ নেতাকে বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। আবার আনকোরা কয়েকজনও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা বলে কমিটি পুনর্গঠন শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে আস্থাভাজন নেতাদের বেছে নিয়েছেন তিনি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও পদায়নের বিষয়ে ফোরামের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পদায়নের বিষয়ে দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও জানতেন না। যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ নিয়ে দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে অতি সম্প্রতি ঢাকাসহ চারটি মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর পরই গতকাল দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৩৯ নেতাকে পদায়ন করা হয়। ঈদের আগে হঠাৎ কিছু কমিটি বিলুপ্ত ও পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বেশ নাড়া দিয়েছে। এদিকে প্রত্যাশিত পদ পাওয়ায় ঈদ আনন্দে যেমন কারো বাড়তি খুশি যোগ হয়েছে। আবার প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় কারো ঈদ আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কারের শঙ্কায় ক্ষুব্ধ নেতারাও প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা বলে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কমিটিতে বড় পরিবর্তন আনার আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হলেও এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনে ফোরামের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। কমিটি ঘোষণার বিষয়টি দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও জানতেন না। অবশ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। এখন সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাউন্সিল না হওয়ায় এই কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে গঠনতন্ত্রে। এবার কাউন্সিল না করেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটিতে রদবদল আনা হলো। গঠনতন্ত্র মোতাবেক জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। কিন্তু গতকাল ৪৫ জনকে পদায়নের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে এটি স্পষ্ট যে, বিএনপিতে আপাতত কাউন্সিলের কোনো সম্ভাবনা নেই।নতুন পদায়নের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কমিটিতে এমন কিছু নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে; যারা রাজনৈতিকভাবে একেবারে আনকোরা।সাংগঠনিকভাবে দক্ষ কয়েকজন নেতাকে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে পদায়ন করা হয়েছে। এদের প্রতি তারেক রহমানের নেতিবাচক ধারণা আছে এবং কাউকে তিনি আস্থাভাজন মনে করেন না। এমন পদায়নকে শাস্তিমূলক বলে মনে করছেন তারা। এতে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসা নেতারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের কিছু নেতা রয়েছেন যারা তারেক রহমানকে মানতে চান না। এই নিয়ে নানা সময়ে নানা গুঞ্জনও রয়েছে। সেই জায়গা থেকে কমিটি গঠনের মাধ্যমে মূলত তারেক রহমান দলে নিজের একটা শক্ত বলয় তৈরি করেছেন। দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে নিজের পছন্দের নেতাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিএনপিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

 
                                             
                                             
                                            