ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রআগামীকাল ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণশপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতিহিট অ্যালার্ট আরও তিন দিন বাড়তে পারেরাঙামাটিতে সড়ক ও নৌপথে অবরোধ চলছে
No icon

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাপান ও আসিয়ানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

রোহিঙ্গা সমস্যার পাঁচ বছর প্রায় শেষ হতে চলছে, আর কিছুদিন পর তা ছয় বছরে পদার্পণ করবে। অনেক সময় গড়িয়ে গেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়া প্রায় স্থবির হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ত্রাণ, মানবিক কার্যক্রম এবং এ সম্পর্কিত সব বিষয়ের উপর এর প্রভাব পড়ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং এই সমস্যা সমাধান বাংলাদেশের একার পক্ষে কখনো সম্ভব না। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক আলোচনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

বর্তমানে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তথা সারা বিশ্বের মনোযোগ রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। চলমান এই বৈশ্বিক সংকটের আড়ালে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রোহিঙ্গা সমস্যা কিছুটা হলেও পেছনে পড়ে যাচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৬১ লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে৷ ইউএস এবং পশ্চিমা বিশ্ব উদার হাতে ইউক্রেনকে সামরিক, মানবিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করছে। ই ইউ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য মানবিক কার্যক্রম ও আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনীয়রা ইউরোপীয় এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই মানবিক ইস্যুতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

বাংলাদেশের দুই বড় প্রতিবেশি দেশ ভারত ও চীনের পাশাপাশি জাপান ও আসিয়ান দেশগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলে প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে তা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে এবং চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান সবার কাম্য তাই আমাদেরকে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। 

ত্রাণ সহায়তার একটা বড় অংশ এই সমস্যা সমাধানে ব্যবহার হলে এর প্রভাব পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্বাস্তু সমস্যা মোকাবেলায় প্রদত্ত সাহায্যের উপর চাপ ফেলতে পারে। যুদ্ধের কারণে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হলে মানবিক সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাবে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ২০২১ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্লানের হিসাবে রোহিঙ্গার জন্য ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রয়োজন ছিল, এর বিপরীতে পাওয়া গেছে ৬৭৪ মিলিয়ন ডলার যা প্রয়োজনের তুলনায় ২৮ ভাগ কম৷

২০২০ সালের পর থেকে এই সহায়তার পরিমাণ গড়ে ৭০ ভাগের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না৷ ইউরোপে শরণার্থী বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের দিকে তাদের মনোযোগ কমে যেতেই পারে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব যেন বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গার উপর না পড়ে এজন্য আমাদেরকে সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত এই সংকটের বিষয়ে আলোকপাতের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন ফোরামে তা শক্তভাবে তুলে ধরে এই ইস্যুটিকে চলমান রাখতে হবে।

কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রথমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধিতা করলেও জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তির পর এখন সেখানে বিদেশি অর্থায়ন শুরু হয়েছে।

জাপান ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ইউএনএইচসিআর ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামকে এক মিলিয়ন ডলার করে সহায়তা দেওয়া হবে । ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তার লক্ষে ২০২১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে এই সহায়তা দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নেয়া উদ্যোগর প্রশংসা করেছে জাপান।