যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পেলো হামাসঝুম বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরলো সিলেটেজলবায়ু পরিবর্তনজনিত কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশতানজানিয়ায় ভারী বৃষ্টি-ভূমিধসে নিহত ১৫৫মাসের শুরুতে বৃষ্টির আভাস, গরম কমা নিয়ে সংশয়
No icon

নিষ্পাপ শিশু ও অসহায় নারী ও বৃদ্ধদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা গুরুতর অপরাধ

অশান্তির আগুনে ঘেরা পৃথিবী। দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ভরা অবনী। এ পৃথিবীতে এখন মানবজীবনের চেয়ে সস্তা কিছু নেই। বিশেষত বাংলাদেশের মতো তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোয় মাত্র ১০ টাকার জন্যও মানুষ খুন হচ্ছে। মিডিয়ায় কান পাতলে কিংবা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই নিহতের স্বজনের আহাজারী আর মাতমের দৃশ্য থাকবেই। সন্তানের হাতে জন্মদাতা কিংবা জন্মদাতার হাতে সন্তান, স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, শিক্ষকের হাতে ছাত্র কিংবা ছাত্রের হাতে শিক্ষক, কর্মচারীর হাতে মালিক কিংবা মালিকের হাতে কর্মচারী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সাধারণ নাগরিক কিংবা নাগরিকের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য খুন- কোনোটাই যেন এখন আর অস্বাভাবিক নয়!

এদিকে কথিত উন্নত ও সভ্য দেশগুলো মোড়লিপনা দেখাতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালিয়ে খুন করছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে। যারা মুসলিম দেশগুলোকে মানবাধিকারের সবক দেয়, তারাই আবার মজলুম মুসলিম দেশগুলোয় প্রতিদিন নিষ্পাপ শিশু ও অসহায় নারী ও বৃদ্ধদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করছে। পৃথিবীর মানচিত্রজুড়েই এখন মুসলিমের তপ্ত খুনের ছোপছোপ দাগ।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে যোগ হয়েছে গুম নামের এক আতঙ্ক। সুস্থ-সবল মানুষকে চোখের সামনে পরিবার থেকে উঠিয়ে নিচ্ছে আর সে লোকটি ঘরে ফিরছে লাশ হয়ে। কখনো এ লাশটিও আর ফেরত পাচ্ছে না হতভাগা পরিবার। কে নিচ্ছে, কোথায় নিচ্ছে, কারা নিচ্ছে- কোনোটারই যেন হদিস নেই।

পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মতো বাংলাদেশের নাগরিকরাও এ হত্যা-নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণ খুঁজে ফিরছে। মুক্তির অন্বেষায় তারাও যত্রতত্র ধর্ণা দিচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে। এমতাবস্থায় আর সব সমস্যার মতো এর সমাধানেও ইসলামই হতে পারে হতাশায় আলোকদিশা। উপায়হীনের অব্যর্থ উপায়। সেটি হলো, আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে তুলে ধরতে হবে ইসলামের অমলধবল আলোকশিখা। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের অমূল্য বাণীগুলো মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে অপরের প্রাণ হরণকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বড় গুনাহসমূহের। শুধু তাই নয় পৃথিবীতে যত রকমের গুনাহের কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বা শরীক সাব্যস্ত করা। এরপর সবচেয়ে বড় গুনাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। হন্তারকের জন্য মহান আল্লাহ দুনিয়ায় বড় শাস্তি এবং আখেরাতে তীব্র আযাবের ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, বল“এসোতোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেনতা তিলাওয়াত করি যেতোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিয্ক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো নাআল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেনযাতে তোমরা বুঝতে পার।”’ {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}


তাফসীরকার বাগবী (রহ.) বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ যে কোনো মুমিন ও মুসলিম রাষ্ট্রে ট্যাক্স প্রদানকারী অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা হারাম ঘোষণা করেছেন। হত্যার ন্যায়সঙ্গত কারণের মধ্যে রয়েছে ইরতিদাদ তথা কোনো মুসলিমের ইসলাম ধর্মত্যাগ, কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা এবং রজম তথা বিবাহিত ব্যক্তির জেনা-ব্যভিচারের দণ্ড। [মা‘আলিমুত তানযীল : ৩/২০৩] আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।’ {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ৬৮-৬৯}
  কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে ইসলাম তার প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

আর তোমরা সেই নাফসকে হত্যা করো নাএ আয়াতে কিসাস তথা হত্যার বদলা হিসেবে হত্যার বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্য সূরায় যেটি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যেমন বলেন, আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ চোখের বিনিময়ে চোখনাকের বিনিময়ে নাককানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবেতার জন্য তা কাফ্ফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেনতার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৪৫}


  পৃথিবীতে হত্যার পরিসংখ্যান দেখলে জানা যাবে, সৌদি আরব যেখানে একমাত্র এই কিসাস ব্যবস্থা এখনো বলবৎ রয়েছে, সবচেয়ে কম খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। ইসলামকে যারা বর্বর বলে তারা শুধু জ্ঞানপাপীই নয়, মূর্খও বটে। কারণ, ইসলামই পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যেখানে যে কোনো নিরপরাধ মানুষের প্রাণসংহারকে মানবতাবিরোধী ও মানবজাতির হত্যার তুল্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে,  যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করলসে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের কাছে আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।’ {সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩২}
তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামও হত্যাকাণ্ডকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 

কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারী : ৬৮৭১; মুসলিম : ৮৮)   
   আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, 
১. আল্লাহর সাথে শরীক করা 
২. জাদু করা 
৩. অন্যায়ভাবে নিরপরাধ লোককে হত্যা করা 
৪. সুদ খাওয়া 
৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা 
৬. রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা 
৭. সুরক্ষিত পবিত্রা নারীকে অপবাদ দেওয়া।’ [বুখারী : ৬৮৫৬; মুসলিম : ১২৯]