বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছাড়া তাঁর জানাজার জন্য আজ বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ওই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং (বুধবার) তাঁর জানাজার জন্য এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছি।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার ৩১ ডিসেম্বর নির্বাহী আদেশে এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। ছুটিকালীন সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত কর্মীরা এর আওতার বাইরে থাকবেন। হাসপাতাল ও জরুরি সেবায় নিয়জিত কর্মীরাও ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের কর্মসূচি হিসেবে তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মাগফেরাতের জন্য আগামী শুক্রবার বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও তাঁর আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।গতকাল সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান খালেদা জিয়া। এরপর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন। সভায় বুধবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও বুধবার এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক বই খোলা হবে। একই সঙ্গে দেশের প্রতিটি মসজিদে খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।মির্জা ফখরুল জানান, বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে সাবেক রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে সভায় ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।