সাতসকালে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজল রাজধানীসাগরে ভূমিকম্প স্বাভাবিক হলেও চিন্তার বিষয়জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে বিরোধ, নানা মতসালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ড্র ৩১ জুলাই
No icon

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে বিরোধ, নানা মত

সংবিধান সংস্কারের যেসব সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, তা কার্যকরের পথ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরোধ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৈরি ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এর খসড়া আমলে নিয়ে বিএনপি চায়, নির্বাচিত সংসদের প্রথম দুই বছরে সংস্কার হবে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু দল চায়, সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে আগামী নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক সংস্কার হোক।এ দাবি নাকচ করে বিএনপি বলছে, ফরমান জারি বা সংবিধানে বদল আনার ক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই। এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে ঐকমত্য কমিশনের ক্ষমতার প্রশ্নও। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত এই কমিশনের কার্যপরিধিতে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কমিশন গঠন-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দল এবং শক্তিগুলো আলোচনা করবে, এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে।কমিশন গত সোমবার সব রাজনৈতিক দলকে জুলাই সনদের খসড়া দেয়। তা চূড়ান্ত হলে সই করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এই সনদে বলা থাকবে, কী কী সংস্কার কীভাবে হবে। খসড়ায় সাত দফা অঙ্গীকার রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংস্কারে যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এর জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিমার্জন, পুনর্লেখন এবং আইনেও অনুরূপ পরিবর্তন করা হবে।তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় সনদ গৃহীত হওয়ার পর পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংস্কারের যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হয়েছে, তা বাস্তবায়ন ও টেকসই করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, এলডিপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আরও কয়েক দলের আপত্তি রয়েছে এ দুটি দফা নিয়ে।

আইনি ভিত্তি বিতর্ক


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভাষাগত কিছু দিক ছাড়া সনদের খসড়ার সঙ্গে তারা একমত। পরবর্তী সংসদে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার বিএনপি রক্ষা করবে।সালাহউদ্দিন আহমেদ একাধিকার বলেছেন, সংসদ ছাড়া সংবিধানের সংস্কার বা সংশোধনের পথ নেই। তবে অন্যান্য দল এই বক্তব্যের বিরোধী। তারা ১৯৭৭ সালের নজির দিয়ে বলছে, সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান এবং গণভোটে সংসদ ছাড়াই সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। এর অধীনে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের করা সব পরিবর্তন অনুমোদন করা হয়।এবারও একই প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংস্কার হতে হবে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেন, জিয়াউর রহমানের পদ্ধতিকেই অনুসরণ করতে চাই। এ জন্য জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। জুলাই সনদই সংবিধানে সংশোধন হিসেবে গণ্য হবে। পরবর্তী সংশোধনে তা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে, যেভাবে বিএনপি ১৯৭৯ সালে করেছিল।

এ বক্তব্যকে গ্রহণ করছেন না সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সামরিক আইনের মাধ্যমে ফরমান জারি করে সংবিধানে পরিবর্তন আনেন। সেই সংবিধানের চেয়ে সামরিক আইনের প্রাধান্য ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি সাংবিধানিক সরকার। সুপ্রিম কোর্ট ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারকে বৈধতা দিয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে সরকারের সংবিধানে বদল আনার ক্ষমতা নেই। ফরমান জারিরও ক্ষমতা নেই।১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট সামরিক শাসন জারি করে একে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ক্ষমতাবলে ফরমান জারির বক্তব্য মানতে রাজি নয় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী আশরাফ আকন  বলেন, এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করেছে বিএনপি। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সংসদের বাইরে গণভোটের মাধ্যমে যেভাবে সংবিধান পরিবর্তনকে বৈধতা দিয়েছিলেন, এবারও তেমন গণভোট হোক জুলাই সনদ নিয়ে। জনগণ সনদকে গ্রহণ করলে এর অধীনে নির্বাচন হবে।১৯৯০ সালে গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর সংবিধানের বাইরে গিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় ৯১-এ। এরপর সংবিধানের একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সাহাবুদ্দীন আহমদ প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যান।

এ উদাহরণ টেনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সাহাবুদ্দীন যেভাবে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে সংসদের অনুমোদন নিয়ে নিজ দায়িত্বে ফিরেছিলেন। একইভাবে জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে।৯০-এ তিন জোটের রূপরেখার আইনি ভিত্তি না থাকায় তা রাজনৈতিক দলগুলো পরবর্তী সময়ে মানেনি বলে অভিযোগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আখতার হোসেন বলেন, এবার একই ভুল করা যাবে না। জুলাই সনদ মেনে চলার আইনি ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।সালাহউদ্দিন বলেন,তিন জোটের রূপরেখা ভঙ্গের অভিযোগ ঠিক নয়। রূপরেখা মেনে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করা হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। শুধু বিটিভি-বেতারের স্বায়ত্তশাসনের কাজটি করা যায়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে বিএনপির সময়েই বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বিস্তারের কারণে সরকারি টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন জরুরি ছিল না।