বৃষ্টির কারণে সবজির দাম কিছুটা বাড়তিদুই পরিকল্পনা সামনে রেখে এগোচ্ছে বাম দলগুলোগভীর নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেতদেশজুড়ে ঝড়বৃষ্টি, বন্যার শঙ্কা সাত জেলায়বুধবার থেকে ৪ দিনের ছুটিতে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার
No icon

দেশজুড়ে ঝড়বৃষ্টি, বন্যার শঙ্কা সাত জেলায়

দেশজুড়ে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বর্ষণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পথঘাট তলিয়ে যায়। দুর্গাপূজা উদযাপনকারী সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ পড়েন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। ছুটিতে গ্রামের বাড়ির পথে থাকা মানুষও সড়ক-মহাসড়কে যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়েন।আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি গতকাল বুধবার বিকেলে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আগামী শনিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে এবং উজানে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ফলে চট্টগ্রাম, ফেনী, লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী তিন দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন তারা।শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টি, বন্যার শঙ্কা নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পুরো ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৩ মিলিমিটার। একই সময়ে রাজধানীর বাইরে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, এই বৃষ্টি দ্রুত থামবে না। বিচ্ছিন্নভাবে আরও তিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।জলাবদ্ধতা থেকে দুর্ভোগ কমাতে আগামী ২৪ ঘণ্টা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হবে। এই বৃষ্টি শনিবার পর্যন্ত চলবে।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম শোভন বলেন, ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ফেনী ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একইভাবে লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে তিস্তার পানি সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভূগাই ও কংস নদীর পানিও আগামী তিন দিনে পৌঁছাতে পারে সতর্কসীমায়। এতে শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার নদীসংলগ্ন এলাকাগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চতর জোয়ার দেখা যাচ্ছে। আগামী তিন দিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।জলজটে ঢাকায় দুর্ভোগ রাজধানীতে মঙ্গলবার রাতভর টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নগরের অসংখ্য সড়ক। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক জায়গার পানি নামেনি। নিউমার্কেট, আজিমপুর, গ্রীন রোড, আরামবাগ, মালিবাগ, মৌচাক মার্কেট, মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়াসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে থাকে। ফলে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে মানুষকে।

নিউমার্কেট এলাকায় সকালে হাঁটু সমান পানির মধ্য দিয়ে মানুষকে হেঁটে, রিকশা বা ভ্যানে চড়ে যেতে দেখা যায়। পানি ঢুকে গেছে অনেক দোকানের ভেতরেও। দোকানকর্মী জুয়েল রানা বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে। এটা আমাদের সারা বছরের দুর্ভোগ। আরেক ব্যবসায়ী রোমান মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরে একই সমস্যা চলায় ব্যবসায়ীরা আগেই মালপত্র উঁচুতে তুলে রাখেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কেও পানি জমে থাকায় রোগী ও স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় পানি জমেছিল। দুপুর নাগাদ ৮০ শতাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। আমাদের কর্মীরা কাজ করছে।উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এ বি এম সামসুল আলম জানান, খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের কারণে আগের তুলনায় জলাবদ্ধতা কমেছে। তবে বিমানবন্দর এলাকায় উন্নয়নকাজের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ।