সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হাদির মৃত্যুতে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হবে।বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হাদির মৃত্যু হয়। রাতে ইনকিলাব মঞ্চ ও হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুবক পেজে দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।এদিকে এনসিপির স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা ডা. আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫০মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে রওয়ানা হবে। সম্ভাব্য সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে।
হাদির মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে পোস্ট করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এই মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত।এনসিপি স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা ডা. আহাদ ভিডিওবার্তায় তাঁর মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডা. আহাদ জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমরা খবর পেয়েছি, হাদি ভাই পরপারে চলে গেছেন।হাদিকে নিয়ে ফেসবুক পোস্টে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, আমাদের ভাই হাদি রওনা দিয়েছেন অনন্তের পথে। আবরার, আবু সাঈদদের মতো হাদি না থেকেও আরও বেশি করে থাকবেন বাংলাদেশের বুকে। ইউ ফেইলড টু কিল ওসমান হাদি!এর আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। পরে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে হাদির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান। ওই বার্তার পর থেকে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছিল। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলা হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে তাঁকে গুলি করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সঙ্গে তাঁর ভাই ছাড়াও বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সরা গিয়েছিলেন।সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে হাদিসহ দুজন একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাচ্ছিলেন। তখন মোটরসাইকেলে আসা ব্যক্তিরা তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তখনই চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রেখে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলির খণ্ডিতাংশ বের করা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে স্থানান্তর করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মিলিয়ে গুলির ঘটনায় দুজনকে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ গুলি ছোড়েন এবং তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি চালান আলমগীর হোসেন ওরফে আলমগীর শেখ। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গুলির ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তারা।হাদিকে গুলির ঘটনায় রোববার রাতে পল্টন থানায় মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তাতে ফয়সালসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। পরে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)।