
দেশে এ বছর লঘুচাপের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ তেমন বাড়েনি বরং কোনো কোনো মাসে তা কমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৬টি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে গত বছর ছিল ৪টি। সাধারণত লঘুচাপ মানেই বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা, কিন্তু এ বছর দেখা গেছে উল্টো চিত্র। গত বছরের তুলনায় এ বছর মৌসুমে মোট বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় ১২-১৫ শতাংশ কম হয়েছে। কিন্তু সময়কাল বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর এ অনিয়মিত ধারা জলবায়ু পরিবর্তনের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিচ্ছে।এ বছরের ৮ জুলাই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৯৯ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে ফেনীতে। এরপরই ২৯ মে নোয়াখালীতে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। ঢাকায় এ বছর সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এটা ছিল এক দিনের ভারী বৃষ্টি।আবহাওয়াবিদগণ বলছেন, মৌসুমি বায়ুর অক্ষাংশ এ বছর বেশিরভাগ সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আর দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে থেমে থেমে, দীর্ঘ সময় ধরে। এ বছর বৃষ্টির সময়কাল বেড়েছে কিন্তু পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ বৃষ্টি বেশি দিন হয়েছে, তবে টানা ভারী নয়। এ ঘটনাকে আবহাওয়াবিদরা জলবায়ু পরিবর্তনের এক সূক্ষ্ম লক্ষণ হিসেবে দেখছেন।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ বলেন, এ বছর লঘুচাপ বেশি হলেও থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু মোট পরিমাণে তা গত বছরের চেয়ে বেশি নয়। মৌসুমি বায়ু উত্তর দিকে উঠতে পারেনি বলেই এমন চিত্র দেখা গেছে এ বছর। বজলুর রশিদ বলেন, বৃষ্টি থেমে থেমে দীর্ঘ সময় ধরে হয়েছে। ফলে অনেকের মনে হয়েছে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে, কিন্তু পরিমাণে তা কিন্তু কম।আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর জুনে ১৯ শতাংশ কম, জুলাইয়ে ২৩ শতাংশ বেশি, আগস্টে ১ শতাংশ বেশি এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে অক্টোবরের প্রথম ৯ দিনেই ৮৭ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা মৌসুমি প্রভাবের শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির ঘনত্ব নির্দেশ করে। তবে এই বৃষ্টি প্রধানত কয়েকটি দিনের ভারী বর্ষণে সীমিত ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
অন্যদিকে গত বছর জুলাইয়ে ৪ শতাংশ কম, আগস্টে ৫০ শতাংশ বেশি, সেপ্টেম্বরে ২৭ শতাংশ এবং অক্টোবর মাসে ৩৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এ বছর দক্ষিণাঞ্চলে (খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম) বেশি বৃষ্টি হলেও উত্তরাঞ্চলে ঘাটতি দেখা গেছে। এ বছর রংপুরে ৩৮ শতাংশ, সিলেটে ৮ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৫ অক্টোবরের পর থেকে বৃষ্টির ধারা কমে যাবে এবং নভেম্বর থেকে উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করবে। দক্ষিণে মৌসুমি বায়ুর কার্যকারিতা বেশি থাকায় এ অঞ্চলে শীত আসতে দেরি হবে, তবে উত্তরাঞ্চলে দ্রুত ঠা-া পড়তে শুরু করবে।, সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে এ বছর লঘুচাপের সংখ্যা বৃদ্ধি, বৃষ্টির অনিয়মিত বণ্টন এবং মোট পরিমাণের হ্রাস এই তিনটি উপাদান বাংলাদেশের মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও নগর পরিকল্পনায় নতুন করে কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।