ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত সাগরে লঘুচাপের আভাস, ভারি বৃষ্টির শঙ্কাবাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩ গুণ বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টাএনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলে ডাকসুতে ভরাডুবি নিয়ে আলোচনা, অনেকের হতাশারাশিয়ায় ৭.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
No icon

ভোট গণনা শেষ ১৪ কেন্দ্রে, বাকি সাতটিতে ৭৫ শতাংশ গণনা শেষ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে; সকাল ৯টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের ২১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। বাকি সাতটি কেন্দ্রের ভোট গণনা ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভোট গণনা শুরু হয়। এর আগে হল সংসদের ভোট গণনা করা হয়।কেন্দ্রী সংসদের ভোট গণনা শুরুর আগে জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনায় পোলিং অফিসারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাতের মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হবে।বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হলে অনুষ্ঠিত হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের আগের দিন রাতে বাম সংগঠন ও ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা ওএমআর মেশিন সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মালিক জামায়াত নেতা এমন অভিযোগ তুললে নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোট গণনায় ওএমআরের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি অর্থাৎ হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শিবিরের প্যানেলের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট ওএমআর মেশিনে আর ব্যালট ছাপানোর প্রতিষ্ঠানকে বিএনপি নেতার বলে দাবি করে।

এদিকে ছাত্রসংগঠনগুলোর দোষারোপের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে নেওয়া হয় এবং সব প্রস্তুতি শেষে রাত ১০টার পর শুরু হয় গণনা। তবে এর আগে ভোটের দিন বিকেল সাড়ে তিনটায় ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করে। পরে সন্ধ্যা সাতটায় বামসমর্থিত আরও চারটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।তবে জাকসু নির্বাচনে আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটির ৬৮ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও বাকি তিন প্যানেলের ১১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে নানা অভিযোগের মধ্যেও শেষ পর্যন্ত ভোটে আছেন। বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ শেষের আধাঘণ্টা আগে নানা অভিযোগ তুলে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ ওই ফোরামের আরও দুই শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ভোট বর্জন করেন।শুক্রবার সকালে নির্বাচন কমিশন অফিসে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর পর পুরো ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভোট গণনায় ধীরগতির জন্য শিক্ষক রাজনীতি আর গ্রুপিং কাজ করেছে বলে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছেন। দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে বিকেলে প্রায় তিনঘণ্টা ভোট গণনা বন্ধ ছিল। পরে সন্ধ্যা সাতটায় হল সংসদের ভোট গণনা শেষে শুরু হয় কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা।

তবে এর দুইঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফিল্ড বলতে আমরা যা বুঝি নির্বাচনে সেটি ছিল না। আমি যাতে পদত্যাগ না করি সেজন্য গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকেই আমার ওপর চাপ ছিল, তবুও আমি পদত্যাগ করছি।তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমি অনেকগুলো অনিয়ম দেখেছি। অনেকগুলো মারাত্মক ত্রুটি দেখেছি। এই ত্রুটিগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আমিসহ নির্বাচন কমিশনের সকলে একমত পোষণ করলেও বিশেষ কিছু কারণে আমার যে মতামত তা গ্রহণে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন আমার মতামতের সুরাহা না করেই ভোট গণনা শুরু করে। তখন আমি আমার যে মত তা লিখিতভাবে জানিয়েছি। সময় খুব কম হওয়ায় আমার পক্ষে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। সে কারণে আমি নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।

এদিকে ক্যাম্পাসে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাধিক জন অভিযোগ করে বলেছেন, জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মধ্যে একাধিক গ্রুপিং আছে। নির্বাচন বর্জন করা তিন শিক্ষক আর পদত্যাগ করা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার উপাচার্যবিরোধী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। ভোট বানচাল করলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষেপে গিয়ে আন্দোলন করতে পারেন, এই সুযোগটা নিতে চান শিক্ষকদের একটি অংশ। শুক্রবার বিকেলে শিবিরের জিএস প্রার্থী মাযহারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচন বানচালে মূলত ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষক নেতা নজরুল ও আব্দুস সাত্তার স্যার যারা মূলত এই অব্যাবস্থাপনার জন্য দায়ী। নজরুল স্যার মেয়েদের একটি হলের প্রভোস্ট হয়েও অন্য হলে ঢুকে মব সৃষ্টি করেছেন এবং নির্বাচন সাময়িক স্থগিত রাখার জন্য দায়ী ছিলেন।

এদিকে শিবিরের জিএস প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম   বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা তিনজন শিক্ষক গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে ভোট বর্জন করে বাসায় এসেছি। বাসা থেকে বের হইনি। এখান থেকে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনার সুযোগ নেই। বরং শিবিরের জিএস প্রার্থীর বক্তব্যে আমরা ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি। তারা ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এই ওএমআর মেশিন আর ব্যালট জামায়াতের একজন নেতার মাধ্যমে ছাপানো হয়েছে। এরই মধ্যে ডাকসু নির্বাচনে ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনায় প্রশ্ন উঠেছে। আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে ঢাবি ভিসির ছবি আছে। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন সেখানে সবাই শিবির। তাই আমরা ম্যানুয়ালি ভোট গণনার দাবি জানিয়েছি।