নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলামআজ ঢাকার বাতাসে কতটা দূষণ?স্বর্ণের দাম ভরিতে বাড়লো ৮ হাজার ৯০০ টাকাদেশজুড়ে পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টির আভাস, তাপমাত্রা কমবেমেট্রো রেলে ঝাঁকুনি, কারওয়ান বাজার-আগারগাঁও রুটে চলাচল বন্ধ
No icon

ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা ৪৬ শিশুসহ নিহত ১০৪

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১০ অক্টোবর। কিন্তু এরপর এক দিনের জন্যও শান্তি রক্ষা হয়নি। ইসরায়েল শতাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে। তারা হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এসব হামলা চালায়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার এক ইসরায়েলি সেনা হত্যার অভিযোগ তুলে গাজায় নির্বিচার বোমা হামলায় ১০৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এর পরও তারা যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল রয়েছে বলে দাবি করেছে।গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা গতকাল বুধবার জানায়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে ইসরায়েলি ধারাবাহিক হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্তত ৪৬ শিশু, বেশ কয়েকজন নারী এবং বৃদ্ধ রয়েছেন। হামাসের উদ্ধারকারী সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সর্বশেষ হামলায় গাজায় নিহতের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন। তাঁর নাম মোহাম্মদ আল-মুনিরাবি। তিনি স্ত্রীসহ মধ্য গাজার নুসেইরাতের একটি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের অভিযোগ, দখলদার বাহিনী গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যেতে মিথ্যা অজুহাত তৈরি করছে। সর্বশেষ হামলার আগে তারা এ পর্যন্ত ১২৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি আক্রমণ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। কারণ, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এবং গোয়েন্দা বিমান আগের মতোই আকাশে ঘোরাফেরা করছে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৬৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ জন আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে ভয়াবহ ২৪ ঘণ্টা দেখল।

গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার রাতে ইসরায়েল ৪৬ শিশুসহ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে।ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বুধবার জানায়, তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসারে যুদ্ধবিরতিতে ফিরে আসছে। তবে প্রয়োজনে আবারও আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তারা অবরুদ্ধ ছিটমহলে ৩০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। তাদের দাবি, লক্ষ্যবস্তুগুলো ছিল হামাসের সামরিক স্থাপনা। সর্বশেষ হামলায় আরও আবাসিক ভবন ধসে পড়ায় মধ্য গাজার একই পরিবারের অন্তত ১৮ সদস্য নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে শিশু, বাবা-মা এবং দাদা-দাদিও ছিলেন।গত মঙ্গলবার ইসরায়েল ঘোষণা করে, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে সর্বশেষ হামাসের হস্তান্তর করা বন্দির মৃতদেহের সঙ্গে আসল ব্যক্তির মিল নেই। এ নিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ও হামাসকে ধ্বংস করতে চান। এরই মধ্যে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড আরেকজন বন্দির দেহাবশেষ হস্তান্তর করবে বলে জানায়। কিন্তু গাজায় নেতানিয়াহুর হামলার নির্দেশ আসার পর সেই মরদেহ হস্তান্তর স্থগিত করা হয়।শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে হামাস কয়েক দিনের মধ্যে গাজায় আটক থাকা ২০ জীবিত বন্দিকে হস্তান্তর করে। তারা ১৫ মৃত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহও হস্তান্তর করেছে। বাকি ১৩ জনের মরদেহ এখনও তাদের হাতে রয়েছে বলে মনে করে ইসরায়েল। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার আগেই চুক্তি লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির কার্যকরে ইসরায়েলই প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটি। মিসরের সঙ্গে মিলে তারা চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন গতকাল বুধবার সব পক্ষকে গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তেরেসা রিবেরা সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, আমাদের শান্তির সুযোগ দরকার, নতুন হামলার জন্য অজুহাত নয়। যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল হয়েছে : ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। দেশটি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের ওপর জোর দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেন, হামলা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি বিপন্ন হয়নি । গত মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফা এলাকায় অবস্থানরত সেনাদের ওপর হামলায় একজন ইসরায়েলি রিজার্ভ সদস্য নিহত হন। গতকাল বুধবার সকালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, একাধিক উল্লেখযোগ্য হামলা চালিয়েছে হামাস। পাল্টা হামলায় হামাসের কমান্ডারসহ কয়েক ডজন সন্ত্রাসীকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পরে সকাল ১০টায় ইসরায়েল ফের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কথা জানায়। ১৮ মাসে ২৭৯ ইসরায়েলি সেনার আত্মহত্যার চেষ্টা ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় ১৮ মাসে কমপক্ষে ২৭৯ ইসরায়েলি সৈন্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। নেসেট রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩৬ সেনা আত্মহত্যা করেছেন। আর ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ১২৪ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহননের পথ বেছে নেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গাজায় যত বেশি সেনা নিযুক্ত করা হয়েছে, ততই সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।