NEWSTV24
৫ বছর উৎসে করে ছাড় চান রপ্তানিকারকরা
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৪ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

পোশাক খাতের মতো অন্যান্য রপ্তানি খাতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস বা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। এ বিষয়ে রপ্তানিকারক সংগঠনগুলোর দাবি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্তারিত পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গতকাল গণভবনে রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য উৎসে করে ছাড় চেয়েছেন রপ্তানিকারকরা। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের ওপর ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে রপ্তানিকারকরা এ হার ৫ বছরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণের অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়া ম্যানমেইড ফাইবার পোশাকের উৎপাদন বাড়ানো এবং রিসাইকেল্ড পণ্য এবং সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নীতি সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা। আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে সব খাতের রপ্তানিকারকদের বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।২০২৬ সালের পর এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এখনকার মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে এ সুবিধা উঠে যাবে ২০২৯ সালে। এ ছাড়া ঔষধ শিল্পে মেধাস্বত্বের বিধানে যে ছাড় রয়েছে তাও উঠে যাবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে নানা উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। এর অংশ হিসেবেই গত বছরের এপ্রিলে রপ্তানি সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কমিটির সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক খাতের বিশাল সম্ভাবনার কথা প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন তাঁরা। বিশেষ করে ম্যানমেইড ফাইবার পোশাকের সম্ভাবনা, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনার ফলে রিসাইেকলড পণ্য এবং সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনার কথা প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছেন তিনি। এ বিষয়ে কিছু নীতি সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে অন্যতম হলো উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে নামিয়ে আনা এবং তা আগামী ৫ বছরের জন্য অব্যাহত রাখা। কারণ, তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফারুক হাসান জানান, আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত সেবা আরও সহজ করার সুপারিশ করেছেন তাঁরা। বাংলাদেশ ফ্রুটস-ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, রপ্তানিতে কার্গো সংকটের কথা তুলে ধরেছেন তাঁরা।বৈঠক বাণিজ্য মন্ত্রালয়ের পক্ষ থেকে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমেছে। ক্রেতারা দরে ছাড় চান। মূল্য পরিশাধ করেছে দেরিতে। এলিডিসি থেকে উত্তরণের পর পণ্য রপ্তানিতে শুল্কছাড় সুবিধা হারালেও নতুন কিছু সম্ভাবনা তৈরি হবে।জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বের হয়ে আসার পর রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী কী উদ্যোগ নিতে হবে, সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনা ছিল। ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পরিমাণ রপ্তানি আয়ের জন্য পণ্যবৈচিত্র্যের বিকল্প নেই।

পোশাকের বাইরে আরও চারটি পণ্য থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় হয়। এসব পণ্য থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে শুধু পোশাক শিল্পকে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানিপণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। অন্যান্য রপ্তানি খাতকেও এ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সুবিধা না পেলে অন্যরা রপ্তানিতে ভালো করতে পারবে না। তাছাড়া ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। এ উত্তরণ-পরবর্তী বড় আঘাত আসবে রপ্তানি খাতে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করতে হবে। এসব দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে তাঁদেরও একই সুবিধা দিতে হবে। রাজস্ব আয়ের ওপর তার প্রভাব রয়েছে।তিনি জানান, এসব প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এগুলো করতে হবে। তবে একবারে করা সম্ভব হবে না। কারণ রাজস্ব আদায়ের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ধাপে ধাপে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তাদের আরও সহযোগিতা করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান বাণিজ্য সচিব।