ঝুম বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরলো সিলেটেজলবায়ু পরিবর্তনজনিত কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশতানজানিয়ায় ভারী বৃষ্টি-ভূমিধসে নিহত ১৫৫মাসের শুরুতে বৃষ্টির আভাস, গরম কমা নিয়ে সংশয়ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
No icon

দেশে ঠকাচ্ছে দালাল, বিদেশে নিয়োগকারী

চাকরি নিশ্চিত হলে বিদেশে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয় সরকার। কত টাকা ব্যয়ে, বিদেশের কোন প্রতিষ্ঠানে, কত বেতনে, কী কী সুবিধা ও শর্তে বাংলাদেশি কর্মী চাকরি করতে যাচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতিতে তা লেখা থাকে স্পষ্ট করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে কর্মীরা চাকরি পাচ্ছেন না। বিদেশে পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মীকে বিমানে উঠিয়েই আর দায়িত্ব নিচ্ছে না। প্রবাসে মানবেতর জীবনযাপন করে তাঁকে দেশে ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি টাকা নিয়ে ভালো চাকরি ও বেতনের প্রলোভনে বিদেশে পাঠিয়ে এই কর্মীদের দেশে ঠকাচ্ছে দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সি। আর কাজ না থাকলেও ভিসা বিক্রি করে কর্মীদের বিদেশ নিয়ে ঠকাচ্ছে নিয়োগকারী কোম্পানি। এতে যোগসাজশ রয়েছে দেশের দালাল এবং বিদেশের কোম্পানির।এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে জাতীয় প্রবাসী দিবস। ২০২২ সাল থেকে দিবসটি সরকারের অনুমোদন পেলেও এবারই প্রথম পালিত হচ্ছে জাতীয়ভাবে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধাখ্যাত বিদেশে থাকা কর্মীরা। তাদের গুরুত্ব দিতেই এ বছর থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের পরিবর্তে প্রবাসী দিবসে জোর দিয়েছে সরকার। তবে নির্বাচনের কারণে এবারও আয়োজন কম। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মাননা দেওয়া হবে প্রবাসী সিআইপিদের। হবে আলোচনা সভা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী বিদেশ গেছেন। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৯২ হাজার ৭৭৩ জন চাকরি নিয়ে বিদেশ গেছেন। তাদের মধ্যে কত কর্মী ফেরত এসেছেন বা চাকরি না পেয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন এ তথ্য নেই সরকারের কাছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৫ শতাংশ কর্মী দেশে ফিরতে বাধ্য হন।ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আউট পাস নিয়ে ফিরেছেন ৮৪ হাজার ৪০২ জন। অর্থাৎ, তারা কাজ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পাসপোর্ট ছাড়া ফিরেছেন। দেশে আসতে ব্যবহার করেছেন দূতাবাস থেকে নেওয়া আউট পাস। তবে তাদের সবাই চলতি বছর বিদেশ যাননি। অনেকেই গেছেন গত কয়েক বছরে। জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আউট পাস নিয়ে ফেরা কর্মীর কয়েক গুণ ফিরেছেন পাসপোর্ট নিয়ে।

জনশক্তি খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মী পাঠাতে পারলেই লাভ। এ কারণেই চাকরি নিশ্চিত না করে কর্মী পাঠানো হয়। এতে লাভবান হন কর্মী পাঠানো এবং গ্রহণ করা দেশের ব্যবসায়ীরা। মালয়েশিয়ার উদাহরণ দিয়ে একজন ব্যবসায়ী জানান, শুধু বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে সেখানে ভুয়া কোম্পানি খোলা হয়েছে। মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীর টাকা দিয়ে কর্মী নেওয়ার কথা। কিন্তু প্রতি কর্মী নিয়োগে তারাই উল্টো নিচ্ছে ৫ হাজার রিঙ্গিত বা সোয়া ১ লাখ টাকা। অথচ মালয়েশিয়া যেতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। বাংলাদেশি যে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি লটারির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর চাহিদাপত্র পায়, তা আবার বিক্রি হয়। এতে কর্মীপ্রতি ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয় লটারি পাওয়া এজেন্সি। এভাবে ধাপে ধাপে লেনদেনে কর্মীপ্রতি খরচ দাঁড়ায় বিমান ভাড়াসহ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এই লেনদেনের কারণেই কাজ না থাকলেও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া হয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে যে কোনোভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তা কাজে লাগাচ্ছে জনশক্তি ব্যবসায়ী ও দালালরা। দেশে বর্তমানে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ২ হাজার ১৩৬টি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর অনুমোদন রয়েছে ১০০টির।