নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে থাকা দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আগামী সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের আগে সংস্কার করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হবে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। তবে এই দেড় লাখ মেশিনের মধ্যে ৪০ হাজার পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। এগুলো আর মেরামত করা সম্ভব হবে না। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়েছিল।ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাশিত অর্থ ছাড় না করা হলে পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আদৌ ইভিএম ব্যবহার সম্ভব হবে কিনা, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করতে পারছে না সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানান, কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার এই চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি জানান, আগের কমিশনের কেনা দেড় লাখ ইভিএম মেশিনের ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন মেরামত করতে হবে। বাকি ৪০ হাজার মেশিন প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য। ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন মেরামতে ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছে।
ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান তীব্র বিতর্ককে আমলে না নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য নতুন ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই প্রকল্পে সম্মতি মেলেনি সরকারের। ফলে প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় ইসি।গত ২০ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বাজেট-সংক্রান্ত বৈঠকে এ খরচের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল ইসি। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।একই অর্থবছরে পুরো বরাদ্দ পাওয়া না গেলেও চলতি বছরে অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক আগামী অর্থবছরে দেওয়া যায় কিনা এ রকম একটি প্রস্তাব ইসি পাঠাচ্ছে জানিয়ে কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, যদি অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করে, তাহলে ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। যদি টাকা না পাওয়া যায়, তাতেও সিদ্ধান্তে আসতে হবে কী করব। ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করব কিনা। সবটাই নির্ভর করবে অর্থ প্রাপ্তির ওপর।
এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, বিএমটিএফ জানিয়েছে, ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করতে তাদের ৬ মাস সময় লাগবে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বসে থাকা যাবে না। তিনি জানান, ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম ব্যবহারযোগ্য করা গেলে ৭০ থেকে ৮০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। তাঁরা আশা করছেন, সরকার টাকার ব্যবস্থা করবে।
আরপিও সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদে : অনেক আগেই আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব পাঠিয়ে রেখেছিল ইসি। এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ইসির সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় হয়ে এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। আইনমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি সম্ভবত ২৮ মার্চ দেশে ফিরবেন। এর পর হয়তো এই প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে উঠতে পারে।